বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

আমরা সুযোগ না দিলে ঝুঁকি নেই

এম হুমায়ুন কবির

আমরা সুযোগ না দিলে ঝুঁকি নেই

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এম হুমায়ুন কবির বলেছেন, আমরা সুযোগ না দিলে আমাদের কূটনৈতিক ঝুঁকিতে থাকার কোনো কারণ নেই। অন্যদের নাক গলানোর সুযোগ আছে এমন কোনো অভ্যন্তরীণ সংকট তৈরি হলেই মূলত ঝুঁকিটা তৈরি হয়। বর্তমানে এখানে একটা রাজনৈতিক সংকট আছে। এই সংকট সবাইকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে পারলে কূটনৈতিক কোনো ঝুঁকি তৈরি হওয়ার কারণ দেখছি না। আমাদের অভ্যন্তরীণ শক্তি ভালো থাকলে, মৌলিক বিষয়গুলোতে ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারব যে, কার সঙ্গে কেমন সম্পর্ক বজায় রাখব।

তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাইরের অবস্থার পরিবর্তন হলে যেমন কূটনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, তেমনি আমার অভ্যন্তরীণ শক্তিটাকে সংহত রাখতে না পারলেও ঝুঁকি তৈরি হয়। এই মুহূর্তে এখানে একটা রাজনৈতিক সংকট আছে সেটা আমরা সবাই বুঝতে পারছি। বাংলাদেশে যে এখনো আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে পারিনি এটা বাস্তব সত্য। আমরা এখনো সবাইকে নিয়ে একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে পারিনি বা মানুষের স্বার্থে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটাকে সাজানোর কাজটা পুরোপুরি করতে পারিনি। আমরা নিজেরা যদি শান্তিপূর্ণভাবে সবাইকে নিয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ এই সমস্যার সমাধান করতে পারি, তাহলে ঝুঁকি থাকার কারণ দেখছি না। সেটা না হলে ঝুঁকি আছে।

সাবেক এ রাষ্টদূত বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় কতগুলো মানদণ্ড আছে। একটা সময় মানদণ্ডগুলো আমরা অভ্যন্তরীণভাবে নির্ধারণ করতে পারতাম। কিন্তু, বিশ্বায়নের ফলে সাম্প্রতিককালে পারস্পরিক নির্ভরতা বেড়েছে। ফলে বৈশ্বিক মানদণ্ড ও নীতি-নৈতিকতার বিষয়গুলো বিভিন্ন দেশে কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেদিকেও একটা বৈশ্বিক মনোযোগ থাকছে। আমাদের এখানে যদি বড় ধরনের কোনো ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হয়, সেটা অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক হতে পারে, তখন আমরা না চাইলেও এখানে বিশ্বের দৃষ্টি পড়বে। অর্থাৎ, আমি যতক্ষণ পর্যন্ত আমার ভিতরের অবস্থাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে না পারব, ততক্ষণ এখানে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি পড়বে। কূটনৈতিক ঝুঁকিও থাকবে। তাই আমাদের যে ঘাটতিটা আছে এটার সমাধানের ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া দরকার। তিনি বলেন, আমরা যখন ২০০৮ সালে ভালো একটা নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে গেলাম, তখন সারা পৃথিবীর মানুষ আমাদের প্রশংসা করেছে, সম্মান করেছে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে এখন এগিয়ে যাচ্ছি, সেটাকেও মানুষ প্রশংসা করছে। কাজেই ভালো কাজ করতে পারলে অন্যদের ভালো দৃষ্টিভঙ্গি পাব এবং তারা আমার সহযোগী হবে। সেটা করতে না পারলে জটিলতা তৈরির আশঙ্কা থাকবে। এতে তাদের দোষারোপ না করে নিজের দিকে মনোযোগ দেওয়াটাই যৌক্তিক।

হুমায়ুন কবির বলেন, ঝুঁকি এড়াতে মৌলিক কিছু বিষয়ে জাতীয়ভাবে সহমত তৈরি করতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমৃদ্ধকরণ, অর্থনৈতিকভাবে সব মানুষকে অন্তর্ভুক্তির মধ্যে আনা, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়, বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে আমি কী ধরনের সম্পর্ক চাই- এসব মৌলিক বিষয়গুলোতে আমাদের মধ্যে যদি সহমত থাকে, তাহলে এগুলো নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকবে না। তখন আমরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারব যে, নিজেদের প্রয়োজনে আমরা কার সঙ্গে কেমন সম্পর্ক বজায় রাখব। অন্যথায় ঝুঁকি তৈরি হবে।

 

সর্বশেষ খবর