বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

পরাশক্তিকে অস্বীকার ঝুঁকি তৈরি করবে

অধ্যাপক রুহুল আমীন

পরাশক্তিকে অস্বীকার ঝুঁকি তৈরি করবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মুহা. রুহুল আমীন বলেছেন, পরাশক্তিকে অস্বীকার করা, তাদের গুরুত্ব-তাৎপর্যকে অনুধাবন না করার ব্যর্থতা একটা দেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশ সম্ভবত সে জায়গায় আছে। পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। যে দেশ যত বেশি ভারসাম্য করতে পারবে, তত কম ঝুঁকিতে থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট ও দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশ কতটুকু ঝুঁকিতে আছে বা যাবে, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, পরাশক্তি দেশগুলোর মধ্যকার প্রতিযোগিতায় আমাদের মতো দেশগুলো কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করবে, কীভাবে তারা যুক্ত হবে সেই কৌশল। পরাশক্তিগুলোর মধ্যকার প্রতিযোগিতায় মিথস্ক্রিয়ার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রনীতির কোন মূলনীতি প্রযোজ্য হবে, কোনটি ‘লেজিট’ প্রমাণিত হবে, কোন বৈশিষ্ট্যগুলো সেখানে যুক্ত হবে, কোনটি হবে না, এগুলো পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। সেখানে আমরা জাতীয় স্বার্থ ও দেশের অর্জনকে প্রাধিকার দিই। রাজনীতিতে একটা কথা আছে, কেউ চিরায়ত বন্ধুও নয়, কেউ চিরায়ত শত্রুও নয়। পরাশক্তিগুলো বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনৈতিক স্বার্থে ছোট দেশগুলোর সঙ্গে জোট বাঁধে এবং তাদের নিজস্ব স্বার্থ অর্জন করে। স্বার্থ অর্জন হয়ে গেলে ওই ছোট দেশগুলোর ভালো পরিণতি হলো, না খারাপ পরিণতি হলো তা তাদের জন্য কোনো ব্যাপার নয়। তাই পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সময় ছোট দেশগুলো কোন কোন জায়গায় ‘ইন্টারাপ্ট’ করবে, কোন জায়গায় ফোকাস করবে এবং তা নিজেদের স্বার্থ অর্জনে কীভাবে সাহায্য করবে, তা সামনে নিয়ে আসা দরকার।

ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক না থাকলে ঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা আছে মন্তব্য করে অধ্যাপক রুহুল বলেন, আমি ভারসাম্যের কথা বলছি। যে দেশ যত বেশি ভারসাম্য করতে পারবে, তত বেশি কম ঝুঁকিতে থাকবে। ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারলে ঝুঁকি তৈরি হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই আমাদের উন্নয়ন অংশীদার। নিঃসন্দেহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সব দেশের পররাষ্ট্র নীতির বিষয়ে খেয়াল রাখে। পৃথিবীর অন্য রাষ্ট্রগুলোও কিন্তু পারত পক্ষে দেশটির সঙ্গে বৈরিতায় জড়ায় না। তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে সম্পর্ক রক্ষা করে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যে অবস্থাগুলো দেখছি, তাতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্র হিসেবে আমি চিন্তিত।

তিনি বলেন, আমাদের সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও ব্যক্তিদের থেকে যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে দিন দিন। ধরুন ভিসা নীতি; আমি শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত, আমিসহ আমার অধিকাংশ সহকর্মী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছি। আমি বৃত্তির কথা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে চিন্তাই করতে পারি না। এটা আমি একটা খাতের কথা বললাম। তৈরি পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রই কোনো কিছু চিন্তা করে না। সেখানে তাদের সঙ্গে আমাদের মিথস্ক্রিয়া খুব সতর্কভাবে হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, রাশিয়া কিন্তু এখন আর সেই অর্থে পরাশক্তি নয়। তারা একটি বৃহৎ শক্তি, পরাশক্তি হিসেবে তারা প্রায় ৭০ শতাংশ ইমেজ ধরে রেখেছে। সেখানে রাশিয়ার দিকে অতিমাত্রায় ঝুঁকে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিসর্জন দেওয়া পররাষ্ট্রনীতির একটি ভুল বিবেচনা বলেই মনে হয়। এক্ষেত্রে আমাদের আরও সতর্ক হওয়া দরকার। আরও অধ্যয়ন করা উচিত।

সর্বশেষ খবর