সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মানুষের সেবা করার চেয়ে বড় কিছু নেই

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানুষের সেবা করার চেয়ে বড় কিছু নেই

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের সেবা করার চেয়ে বড় কিছু নেই। রাজনৈতিক নেতাদের জন্য এটাই হচ্ছে সব থেকে বেশি দরকার। সংসদ সদস্যরা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

গতকাল বিকালে একাদশ জাতীয় সংসদে নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুস ও নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মমিনের মৃত্যুতে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ অধিবেশনের শুরুতে এ দুই এমপির মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ সময় প্রয়াত সংসদ সদস্যদের জীবনী নিয়ে আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। শোক প্রস্তাবে অংশ নেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বিরোধী দলের চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আবদুল আজিজ, শফিকুল ইসলাম শিমুল, ওয়াসিকা আয়শা খান এবং সাজ্জাদুল হাসান।

শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়েই আপ্লুত শেখ হাসিনা বলেন, প্রায় প্রতিটি অধিবেশনই আমাদের শোক প্রস্তাবের মাধ্যমে শুরু করতে হয়। এ পর্যন্ত ২৮ জন সংসদ সদস্যকে হারিয়েছি। এর মধ্যে ২৬ জনই আওয়ামী লীগের ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা নতুন নির্বাচিত হয়েছেন তাদের প্রতি আবেদন থাকবে যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সে স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া, এটাই আমাদের, আপনাদের একমাত্র লক্ষ্য। তিনি বলেন, যারা মারা গেছেন, এরা সবাই ছিলেন জাতির পিতার একনিষ্ঠ কর্মী, আদর্শের কর্মী। আসলে আমাদের বহু নেতা-কর্মী যাদের আমি হারিয়েছি, তারা জেল-জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর এদের ওপর প্রচুর অত্যাচার নির্যাতন হয়েছে। রেবেকা মমিন, আবদুল কুদ্দুস সবাই জনগণের জন্য কাজ করে গেছেন। রেবেকা মমিন তার প্রচুর সম্পত্তি আশ্রয়ণ প্রকল্প ছাড়াও জনগণের জন্য দান করে গেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। আমি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ৩০ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা অবদান রেখে গেছেন, আমাদের সংসদ সদস্য যারা চলে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদেরকে উন্নত দেশে উন্নীত করতে হবে। সবাইকে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে মানুষের সেবা করে যেতে হবে, এই আমি চাই। আজ যারা প্রয়াত হয়েছেন তারা অবদান রেখে গেছেন, তার জন্য আমরা এতদূর আসতে পেরেছি। এটা মনে রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমি সরকার গঠন করার পর থেকে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। আমাদের উন্নয়নের ধারা দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের এমপিরা প্রচ- দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। এ সময় তিনি আবদুল কুদ্দুস ও রেবেকা মমিন-সহ প্রয়াত সাবেক ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের স্মৃতিচারণা করেন।

সংসদ চলবে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত : একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশন আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল সংসদীয় কার্য-উপদেষ্টা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীসহ কমিটির সদস্যরা অংশ নেন।

গতকাল বিকাল ৫টায় অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সংসদ পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত করা হয়। তারা হলেন- দীপংকর তালুকদার, এ বি তাজুল ইসলাম,  মোর্শেদ আলম, আবিদা আনজুম মিতা ও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না, শান্তিতে থাকতে চাই : বাসস জানায় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষায় প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না, বরং শান্তিতে থাকতে চাই। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’

গতকাল নৌবাহিনী প্রধানের সচিবালয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী সিলেকশন বোর্ড-২০২৩-এ ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির স্বার্থে বাংলাদেশ সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি  দেশের সঙ্গে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। যেহেতু আমরা জাতির পিতার দেওয়া নীতি অনুসরণ করছি, তাই আমরা সবার সঙ্গে সমানভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখছি। কারণ আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হব না। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখব। তাঁর সরকার সফলভাবে এ ধরনের সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। শেখ হাসিনা নৈতিকতা, ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে জ্ঞান, দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দায়িত্ববোধ ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য বাছাইয়ে বিচক্ষণ ও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করার জন্য নির্বাচন বোর্ডকে নির্দেশ দেন। তিনি আরও বলেন, ‘নেতৃত্বের পদের জন্য আপনাদের এমন কর্মকর্তা বেছে নেওয়া উচিত-যারা যে কোনো সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারদর্শী এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে তাদের বিচক্ষণতা প্রয়োগের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করেছি। শুধু তাই নয়, সারা বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের একটি উজ্জ্বল ভাবমূর্তিও তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হতে সক্ষম হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর