সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুই ভিভিআইপি সফরের প্রস্তুতি

ম্যাক্রোঁর সফর হবে ঐতিহাসিক ও ল্যাভরভের সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব ভিন্ন মাত্রার

জুলকার নাইন

দুই ভিভিআইপি সফরের প্রস্তুতি

পরপর ঢাকা সফরে আসছেন যথাক্রমে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফর করবেন ৭ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশে রাশিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটাই হবে প্রথম সফর। অন্যদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ সফরে আসবেন আগামী ১১ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের এটাই হবে দ্বিতীয়বারের মতো ফ্রান্সের কোনো  প্রেসিডেন্টের সফর। পরপর এই দুই ভিভিআইপির ঢাকা সফর নিয়ে  জোর প্রস্তুতি চলছে। এসব সফরে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক সম্পর্ক বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এর মধ্যে ঢাকার পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের ব্যস্ততা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে দুই ভিভিআইপির সফরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রস্তুতি।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, নয়াদিল্লির জি-২০ সম্মেলনের পরপরই ঢাকা চলে আসবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তাঁর সফরের সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিক খসড়া অনুসারে, ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছবেন। এদিনই তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। পরে তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবে। সেখানে আয়োজন হবে নৈশভোজ। পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর একান্ত বৈঠক হবে। এদিনই ঢাকা ত্যাগ করবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। সূত্র জানায়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরকে ঐতিহাসিক সফর হিসেবে দেখছে ঢাকা। এই সফরকে সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা থাকছে। ফ্রান্স ও বাংলাদেশ কৌশলগত দিকনির্দেশনার জন্য নিয়মিত রাজনৈতিক পরামর্শের মাধ্যমে তাদের অংশীদারি বাড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। দুই দেশ রাজনীতি ও কূটনীতি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়সহ সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য আলোচনা করবে। আলোচনায় থাকবে দুই দেশ প্রাসঙ্গিক আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় ক্ষেত্রে টেকসই ও বাস্তব সহযোগিতা বাড়ানো। পাশাপাশি দুই দেশের অংশীদারির প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে আলোচনা করবে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স। এ জন্য দুই দেশ সংলাপ জোরদার করা ও প্রশিক্ষণে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে বিশেষ জোর দিচ্ছে। প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে সহযোগিতা বাড়ানোর আলোচনা হবে। ইতোমধ্যেই দুই দেশই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করেছে। দুই দেশের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে থাকবে অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, সুরক্ষিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য অভিন্ন অবস্থান নির্ধারণ।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব ভিন্ন মাত্রার : কূটনৈতিক সূত্র জানায়, কাগজে কলমে দুই দিনের সফর হলেও ঘণ্টার হিসেবে ২৪ ঘণ্টার কম সময় ঢাকায় অবস্থান করবেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকা এসে প্রথম দিনেই বিকালে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। পরদিন শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এই সাক্ষাতের পর নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন ল্যাভরভ। সূত্র জানায়, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র, রোহিঙ্গা সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধ, জাহাজ জটিলতা, জাতিসংঘে সহযোগিতা, বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও এই সফরের রাজনৈতিক তাৎপর্য বেশি। কারণ বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতি ও বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্ব কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর বিশেষ মাত্রা যোগ করবে। এর বাইরে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষে জোর দেওয়া হবে। এই প্রকল্পে রাশিয়াকে অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রুশ জাহাজকে বাংলাদেশে ঢুকতে না দেওয়ার প্রসঙ্গ আলোচনায় আনতে পারে রাশিয়ার পক্ষ।  রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন জানিয়েছেন, আমাদের অনেক দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আমাদের রোহিঙ্গা ইস্যুও আছে। জানা যায়, গত বছরের ২৩ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত আইওআরএ কাউন্সিলের ২২তম বৈঠকে যোগ দিতে ল্যাভরভের বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সফরটি বাতিল করা হয়। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ টেলিফোনে কথা বলেন এবং বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় এই সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর