সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দিনভর ভোগান্তির পর রাতে ধর্মঘট প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

পেট্রোল পাম্পের মালিকদের (একাংশের) ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল রাতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গে বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান রতন বলেন, বিপিসির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তারা। তাই চলমান কর্মসূচি ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হলো।

সরকারি সংস্থার কাছ থেকে জ্বালানি তেল (ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন) কিনে তা বিভিন্ন ডিপো ও পেট্রোলপাম্পে পরিবহন এবং গ্রাহকের কাছে বিক্রি করেন এই দুই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। তিন দফা দাবি পূরণে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল এই দুই অ্যাসোসিয়েশন। এর মধ্যে একটি দাবি পূরণ করা হয়েছে। তবে তাদের মূল দাবি, জ্বালানি তেলে কমিশন বাড়ানো।

দাবি আদায়ে গতকাল ভোর থেকে সারা দেশে জ্বালানি তেল উত্তোলন, পরিবহন ও বিক্রিতে ধর্মঘট পালন করে তারা। এর প্রভাবে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প তেলশূন্য হয়ে পড়ে। জ্বালানি তেল নিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা। ধর্মঘটের কারণে ঢাকার বাইরে অনেক জেলার পেট্রোল পাম্পগুলোতে তেলের সংকট দেখা দেয়।

বেসরকারি এক কর্মকর্তা সবুজ আহমেদ গতকাল বাড্ডার দুটো পেট্রোল পাম্প ঘুরেও তার মোটরসাইকেলের জন্য অকটেন পাননি। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সকালে অফিসে যাওয়ার পথে বাড্ডার দুটো পেট্রোল পাম্প ঘুুরে অকটেন পাইনি। এরপর যমুনা ফিউচার পার্কের কাছের আরেকটি পাম্পেও তিনি তেল পাননি। পরে ধর্মঘটের কথা জানতে পারেন। গাড়িতে যে তেল আছে তা দিয়ে বড়জোর আর এক দিন চলা যাবে। মিরপুর কালশীর সুমাত্রা ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার সৈয়দ কামরুজ্জামান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ধর্মঘট হবে এমন আশঙ্কায় গত বৃহস্পতিবার আমরা বাড়তি অকটেন এনে রিজার্ভ করে রাখি। শনিবার ধর্মঘটের ঘোষণার পর তেল কিনতে পাম্পে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। একপর্যায়ে মারামারি শুরু হলে পুলিশের সহায়তায় এদিন রাতে পাম্প বন্ধ করি। রবিবার সকাল থেকে আবার তেল নেওয়ার জন্য যাত্রীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ান। মাঝে দুই ঘণ্টা তেল দেওয়া বন্ধ রেখে বিকালে আবারও তেল বিক্রি শুরু করি। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই এই তেল বিক্রি শেষ হয়ে যায়। মিরপুর-১৪ নম্বরের দিগন্ত ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে জ্বালানির মধ্যে শুধু ডিজেল দেওয়া হচ্ছে। অকটেন রিজার্ভে না থাকায় এই জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ ছিল। এই ফিলিং স্টেশনের কর্মকর্তারা জানান, দেশব্যাপী পেট্রোল পাম্প মালিকদের ডাকা ধর্মঘটের কারণে এমনটি হয়েছে। জানা যায়, মিরপুরের দিকে অনেক পাম্প স্টেশন খোলা থাকলেও সেখানে অকটেন ছিল না। আবার ঢাকার বেশ কয়েকটি স্থানে গতকাল পেট্রোল পাম্প বন্ধ ছিল। অকটেন না থাকার কারণে প্রাইভেটকারসহ বিলাসবহুল গাড়ির চালক ও মালিকরা বিপাকে পড়েন। অকটেন না পেয়ে অনেক গাড়িচালক পেট্রোল পাম্প থেকে ফিরে যান। পেট্রোল পাম্প মালিকদের দাবি তাদের কমিশন বাড়িয়ে সাড়ে ৭ ভাগ করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের শিল্প থেকে বাদ দিয়ে কমিশন এজেন্ট ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। যা এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গত শনিবার রাতে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করেছে।

 এ ছাড়া পুরাতন ট্যাংক লরি অবসরের সময় ২৫ বছর থেকে বাড়াতে হবে। তিনটি দাবির মধ্যে দুটি পূরণ না হওয়ায় পাম্প মালিকদের একাংশ ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন। তারা ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ রেখেছেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নামে যারা ধর্মঘট ডেকেছে তারা সংগঠনের কেউ নয় জানিয়ে দ্রুত এই ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন এই সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক। তিনি বলেন, ঢাকা, ময়মসসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রামের কোনো পেট্রোল পাম্প বন্ধ নেই। তবে তেলের ডিপোগুলোতে তেল উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়ায় তেল সরবরাহে ঘাটতি হয়েছে। এ জন্য কিছু পাম্প তেল দিতে পারছে না। গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সরকার এরই মধ্যে আমাদের বেশ কিছু দাবি মেনে নিয়েছে। তবে কমিশন সাড়ে ৭ শতাংশ করার দাবিটি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। কমিশন বাড়লে সেটা বিপিসি ঘোষিত দাম থেকে কাটা হবে নাকি দাম বাড়িয়ে আদায় করা হবে এগুলো নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমার নিজের পেট্রোলপাম্প রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা ছিল। কিন্তু তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। সরকার যদি ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে না নেয় আমরাই সারা দেশে ধর্মঘট ডাকব।

এদিকে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহার হয়েছে গতকাল  রাত পৌনে ১০টায়। জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির খুলনা বিভাগীয় সভাপতি আবদুল গফ্ফার বিশ্বাস এটি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, জ্বালানি তেল পরিবহনকারী ট্যাংকলরির অর্থনৈতিক জীবনকাল ৫০ বছর করা ও জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট হওয়ায় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গেজেট প্রকাশ করার দাবি এরই মধ্যে মেনে নিয়েছে সরকার। অপর দাবি জ্বালানি তেল বিক্রির ওপর প্রচলিত কমিশন বৃদ্ধির বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হলো।

এর আগে গতকাল সকাল ৮টা থেকে ব্যবসায়ীরা ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করেন। এর ফলে খুলনায় পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

সর্বশেষ খবর