মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাচার ৩০০ কোটি টাকা

পোশাক রপ্তানির আড়ালে জালিয়াতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পোশাক রপ্তানির আড়ালে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। দেশের ১০টি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এ কাজ করেছে বলে জানিয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

গতকাল সংস্থাটি জানায়, ওই ১০টি প্রতিষ্ঠান হলো- প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, ফ্যাশন ট্রেড, এম ডি এস ফ্যাশন, হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড, থ্রি-স্টার ট্রেডিং, ফরচুন ফ্যাশন, অনুপম ফ্যাশনওয়্যার লিমিটেড, পিক্সি নিটওয়্যারস লিমিটেড, স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড ও ইডেন স্টাইল টেক্স।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর জানায়, অভিনব কায়দায় রপ্তানি জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্যের চালান বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, কিন্তু রপ্তানি আয়ের সেই বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবসিত হচ্ছে না, এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা তদন্ত করে এই অর্থ পাচারের ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতি করে অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি করেছে এবং বিল অব এক্সপোর্টের ২৪ নম্বর কলামে নমুনার কোড ২০ ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অর্থ দেশে প্রত্যাবসিত না হয়ে পুরো চালানের রপ্তানিমূল্য বাবদ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ও বিধিবহির্ভূত কোড ব্যবহারের মাধ্যমে রপ্তানির একাধিক ঘটনা সম্প্রতি কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর উদঘাটন করেছে। ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিগত সময়ে ১ হাজার ২৩৪টি পণ্য চালানে এমন জালিয়াতি করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ১ হাজার ২৩৪টি চালানে ৯ হাজার ১২১ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার প্রত্যাবাসনযোগ্য বিদেশি মুদ্রার সম্ভাব্য পরিমাণ ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ১১৮ মার্কিন ডলার অর্থাৎ ৩০০ কোটি টাকা। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের যুগ্ম পরিচালক শামসুল আরেফিন খান গতকাল জানান, ওইসব প্রতিষ্ঠান টি-শার্ট, টপস, নারীদের পোশাক, ট্রাউজার, বেবি সেট, পোলো শার্ট প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, নাইজেরিয়ায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি দেখিয়ে অর্থ পাচার করেছে। এই ১০ প্রতিষ্ঠানের বিল অব এক্সপোর্ট পর্যালোচনায় বিল অব এক্সপোর্ট ও ইএক্সপিতে বর্ণিত তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে ১০ প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই সেই ব্যাংকে লিয়েনকৃত নয়। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে সাউথইস্ট ব্যাংক সম্পর্কিত নয় বলে সেই ব্যাংকের মাধ্যমে বিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত সেলস কন্ট্রাক্ট বা ইএক্সপির রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবসিত হয়নি বা হওয়ার সুযোগও নেই। কাস্টমস গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেডের ঠিকানা ঢাকার আশুলিয়াতে। এদের ২০১৯ সালে ৩৮৩টি এবং ২০২০ সালে ৮টিসহ ৩৯১টি রপ্তানি চালানের মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়েছে। এরা ৩ হাজার ৮০ মেট্রিক টন টি-র্শার্ট, প্যান্ট, ট্যাংক-টপ, পাজামা প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করেছে। ফ্যাশন ট্রেডের ঠিকানা রাজধানীর গুলশানে। এরা ২০২০ সালে ৭৩টি, ২০১৯ সালে ১১৬টি, ২০১৮ সালে ৫৭টিসহ ২৪৬টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে ১ হাজার ৭৭৯ মেট্রিক টন টি-শার্ট, প্যান্ট, ট্যাংক-টপ, পাজামা প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, সুদান ও মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করেছে। এম ডি এস ফ্যাশন রাজধানীর উত্তরায়। এরা ২০২০ সালে ১৮২টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে ১ হাজার ৩৭৬ মেট্রিক টন টি-শার্ট সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, কাতার ও ফিলিপাইনে রপ্তানি করেছে। হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড গাজীপুরের টঙ্গীতে। এ প্রতিষ্ঠান ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ১৫৬টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে ১ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন টি-শার্ট রপ্তানি করেছে। এসব পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, কাতার, নাইজেরিয়া, কুয়েত ও মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করা হয়েছে। থ্রি-স্টার ট্রেডিং রাজধানীর বনানীতে। এ প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ১২০টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে ৮১৬ মেট্রিক টন টি-শার্ট মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, কানাডা ও মিসরে রপ্তানি করেছে। ফরচুন ফ্যাশন রাজধানীর মিরপুরে। এরা ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ৫৯টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে ৪৩৫ মেট্রিক টন টি-শার্ট সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, মিসর ও কানাডায় রপ্তানি করেছে। অনুপম ফ্যাশনওয়্যার লিমিটেড রাজধানীর কচুক্ষেতে। এ প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ৪২টি রপ্তানি চালানের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে। এরা সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলজিয়াম, নাইজেরিয়া, জর্জিয়া ও মালয়েশিয়ায় ১৯৫ মেট্রিক টন টি-শার্ট রপ্তানি করেছে। পিক্সি নিট ওয়্যারস লিমিটেড গাজীপুরের টঙ্গীতে। এরা ২০২০ সালে ২০টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, কুয়েত, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া ও শ্রীলঙ্কায় ১৭০ মেট্রিক টন টি-শার্ট রপ্তানি করেছে। স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড রাজধানীর শাহবাগে। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১০টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে ৬৬.৮ মেট্রিক টন টি-শার্ট ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া ও পানামায় রপ্তানি করেছে। রাজধানীর খিলক্ষেতের ইডেন স্টাইল টেক্স ২০২০ সালে ৮টি চালানে জালিয়াতি করে ৪২ মেট্রিক টন টি-শার্ট টোঙ্গা, ওমান, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি করেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর