বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

একক আধিপত্য চায় না যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপ, নির্বাচন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

একক আধিপত্য চায় না যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় না, ইন্দো প্যাসিফিকে কোনো সুনির্দিষ্ট একটি দেশ আধিপত্য বিস্তার করুক, তারা চায় সমুদ্র অবাধ ও মুক্ত থাকুক। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া মার্কিন রাজনৈতিক সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেজনিক দেশটির এই মনোভাব প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গতকাল দুই দেশের নবম নিরাপত্তা সংলাপের পর মিরা রেজনিক পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এই সাক্ষাতে মিরা রেজনিক বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার বদ্ধপরিকর।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গতকাল সকালে প্রায় ৬ ঘণ্টাব্যাপী নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ২০২২ সালের এপ্রিলে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপের ফলোআপ হয়েছে এবার। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ পুলিশ, বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেন। সংলাপে প্রতিরক্ষা বিষয়ক নিরাপত্তা ইস্যুগুলো বাদে সাইবার নিরাপত্তা, পরিবেশ, জ্বালানি নিরাপত্তা, ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব জানান, ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির সঙ্গে সব ধরনের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু আছে। তারা চায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক যেন আরও গভীরতর হয়। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সব দিকেই। আমরাও চাইছি তাদের সঙ্গে সম্পর্কে যেন কোনো গ্যাপ না থাকে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তিনি জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা বদ্ধপরিকর, প্রধানমন্ত্রীও সে কথা বলেছেন। এখন নির্বাচন কমিশন বাকি কাজগুলো করছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা লাগলে যুক্তরাষ্ট্র করবে বলেছেন মিরা রেজনিক। আমরা আরও জানিয়েছি, নির্বাচনের যে ধরনের প্রস্তুতি হওয়া দরকার তা হচ্ছে দেখছি। রাজনৈতিক দল কে কি কীভাবে সেটা বলা যাচ্ছে না।

সচিব বলেন, এখানে সরাসরি জিসোমিয়া-আকসা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়নি। প্রতিরক্ষা সংলাপে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে আমরা বলেছি, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি নিয়ে কাজ আছে। আপনারা জানেন যে, কৌশলগত সংলাপে জাপানও আমাদের কনসিডার করছে, তাদের অফিশিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্সে আমাদের তারা ক্যান্ডিডেট কান্ট্রি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সুতরাং বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছি। আগামীতে তাদের সঙ্গেও সেভাবেই আলোচনা হবে বলে আমরা আশা রাখি।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে তারা আলোচনা করেছে। আমরা বলেছি, প্রতিটি মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে যে অভিযোগ আসে, যে প্রতিবেদন আসে, প্রতিটিকেই আমরা খুব সহজেই নিই। আমরা বাহিনীর সঙ্গে আলাপ করে সেগুলোর উত্তর বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দেই। আমরা আমাদের দেশে কোনো ইম্যুনিটির সুযোগ রাখি না। আমাদের প্রতিটি বাহিনীর এসওপি আছে। একটা গুলি খরচ করলেও জবাবদিহি করতে হয়। যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনায় সবসময় সরকার যে ইনভলব থাকে, তা তো নয়। তিনি বলেন, আমরা কিছু দিন আগে দেখেছি যে, গাজীপুরে একজন শ্রমিকনেতা মারা গেলেন, সেখানে তো সরকারের কিছু করার নেই, তবে শেষ পর্যন্ত আমাদের তো জবাবদিহির বিষয় থাকে। আমাদের ১৭০ মিলিয়ন জনসংখ্যার একটি দেশ, সেখানে তো এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আমাদের বাহিনীর কেউ কিছু করলে এসওপি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। আমরা র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে লিখিতভাবে জবাব দিয়েছি। তাদের প্রক্রিয়ার মধ্যে সেটি আছে। এ নিয়ে আমরা সজাগ আছি, এখানে দায়মুক্তির কোনো সুযোগ নেই।

এর আগে, নিরাপত্তা সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মিরা রেজনিক। বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সমস্যা, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার, সামরিক সহযোগিতা, শান্তিরক্ষা, নিরাপত্তা সহায়তা ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা হয়।

সর্বশেষ খবর