বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বড় পদোন্নতিতেও মুখভার অনেকের

যুগ্মসচিব হওয়া ১১ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পিএস - প্রায় সবাই বসবেন বর্তমান রুমে, বদলাবে নেমপ্লেট

ওয়াজেদ হীরা

গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে ছিল মিষ্টির ছড়াছড়ি। যুগ্মসচিব পদে বড় পদোন্নতিতে সব মন্ত্রণালয়ে ছিল আনন্দ উচ্ছ্বাস। তবে আনন্দের মধ্যেও মুখভার ছিল অনেক কর্মকর্তার। পদোন্নতি পাওয়া ২২১ জন কর্মকর্তার মধ্যে সরকারের ১১ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির একান্ত সচিব (পিএস) রয়েছেন। পদের বিপরীতে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রায় সবাই বসবেন যার যার বর্তমান রুমে। পরিবর্তন হবে নেমপ্লেট। পদোন্নতি বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এটা নিয়মিত পদোন্নতি, যারা পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য তাদেরই দেওয়া হয়েছে। কে কোন পদে দায়িত্ব পালন করছেন পদোন্নতিতে তা দেখা হয়নি।

পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ মঙ্গলবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নতুন পদে যোগদানের জন্য সকাল থেকেই ভিড় করেন। অনেকে অবশ্য সোমবার রাতেই অনলাইনে নতুন পদে যোগদানপত্র জমা দিয়েছেন। এরপর মঙ্গলবার রাতে কর্মকর্তাদের যোগদানপত্র গৃহীত হয়েছে বলে জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার বিভিন্ন ভবন ও মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা মন্ত্রী সচিবসহ সিনিয়র জুনিয়র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মিষ্টি বিতরণে ব্যক্ত সময় কাটান। রীতিমতো উৎসবমুখর ছিল গোটা সচিবালয়। গতকাল সরকারি ছুটি থাকায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পদোন্নতিপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিবরা। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, পদের বিপরীতে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি হওয়ায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রায় সব কর্মকর্তা বর্তমানে যে দায়িত্ব পালন করছেন সেটাই পালন করবেন। যে কক্ষে বসতেন সেখানেই হয়তো বসবেন। যারা বর্তমান কক্ষে বসবেন দৃশ্যত তাদের নেমপ্লেটে পদবি পরিবর্তন হবে।  কাউকে কাউকে হয়তো নতুন কোথাও পদায়ন করা হতে পারে। তবে সেই সংখ্যাটা খুব বেশি নয়।  

যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির বিষয়টি দীর্ঘদিন আলোচনায় ছিল। জুলাই মাসেই শেষ হয় প্রক্রিয়া। শোকের মাসের কারণে আগস্টে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। অবশেষে গত সোমবার রাতে জারি হয় প্রতীক্ষিত প্রজ্ঞাপন। যারা পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পিএস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর পিএস, বাণিজ্যমন্ত্রীর পিএস, সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর পিএস এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর পিএস, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর পিএস, শিল্প প্রতিমন্ত্রীর পিএস রয়েছেন। জাতীয় সংসদের হুইপের পিএস, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের পিএস, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যানের পিএস, সংসদ উপনেতার পিএস যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তারা অনেক আগেই এর যোগ্যতা অর্জন করেছেন। কে কোথায় দায়িত্বে আছেন সেটা সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) দেখে না বরং দেখে কর্মকর্তাদের কর্ম। বিসিএস ২০ ব্যাচের তিনজন, ২১ ব্যাচের ১১ জন এবং নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে ২২তম ব্যাচের ১৮২ জন এবং অন্যান্য ক্যাডার থেকে উপসচিব হওয়া ২৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্মসচিব করা হয়েছে। বিসিএস ২২তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ৩০০ জনের মধ্যে ফিটলিস্ট করেছিল ২৪৩ জন কর্মকর্তার। সে হিসেবে ফিটলিস্ট থেকেও বাদ পড়েছেন ৬১ জন। পদোন্নতি না হওয়া ২২ ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,  প্রত্যাশায় ছিলাম, বন্ধু-ব্যাচম্যাটদের হয়ে গেল, সবাই জানতে চায় আমার কেন হলো না? এই কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। পদোন্নতি না হওয়া অনেকেই ওইদিন অফিসে এসে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব এড়াতে দ্রুতই বেরিয়ে গেছেন। কেউ ফোন বন্ধ রাখেন। পদোন্নতিবঞ্চিত ২২ ব্যাচের আরেক কর্মকর্তা জানান, অনেক দিন পর পদোন্নতি হলো। অনেকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছে আর আমার মতো হতভাগারা চেয়ে চেয়ে দেখছি। প্রজ্ঞাপন হওয়ার পর ঘর থেকেই প্রশ্ন শুরু হয়েছে কেন আমারটা হলো না। আসলে এর জবাব আমার নিজের কাছেও নেই। ২০ ব্যাচের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ব্যাচের অনেকে এখনো পদোন্নতি পাননি। এবার কয়েকজন পেয়েছেন। তবে সংখ্যাটা আরও বেশি হলে ভালো হতো।

সর্বশেষ খবর