শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দৃষ্টি দিল্লি হাসিনা-মোদি বৈঠকে

♦ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আজ দেড় ঘণ্টার আলোচনা ♦ স্বাক্ষর হবে তিন সমঝোতা স্মারক ♦ সোনিয়া মমতার সঙ্গেও কথা হবে

জুলকার নাইন, নয়াদিল্লি থেকে

দৃষ্টি দিল্লি হাসিনা-মোদি বৈঠকে

বহুল আগ্রহের সফরে আজ নয়াদিল্লি আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসন্ন নির্বাচনের আগে এটাই তাঁর শেষ ভারত সফর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে দেড় ঘণ্টার বৈঠক করবেন। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেড় ঘণ্টার আলোচনায় তিনি দ্বিপক্ষীয় বিষয়াদির বাইরে আধা ঘণ্টা একান্ত কথা বলবেন। ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্র বলছেন, নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বাইরে শুধু শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এটা অবশ্যই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। স্বভাবতই এখানে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মনোভাবের প্রতিফলন ঘটবে। নয়াদিল্লি সফরে কংগ্রেসের শীর্ষনেতা সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক ও মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে কথা হবে প্রধানমন্ত্রীর।

সূত্র জানান, জি২০-এর মতো মহা আয়োজনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেড় ঘণ্টা সময় দেওয়া বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এতেই ভারতের অবস্থান অনেকখানি পরিষ্কার হয় বলে মনে করছেন ভারতের কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে সময় দেওয়াকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। কারণ নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর বাসভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন বিরল। সাধারণত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দরাবাদ হাউসে এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়ে থাকে। সেখানে দুই ডজনের বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের নয়াদিল্লিতে অবস্থানের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর বাসভবনে বৈঠকে ডাকা অবশ্যই ভিন্নমাত্রার। একান্তে রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলার জন্যই বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে মনে করেন ভারতের কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন গতকাল ঢাকায় তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করলেও তা নয়াদিল্লিতে স্বাক্ষর হচ্ছে না। এসব স্মারক ঢাকা-দিল্লি বিভিন্ন সময়ে নিজেদের সুবিধামতো স্বাক্ষর করে নেবে বলে জানিয়েছেন নয়াদিল্লির কূটনীতির দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, মহা আয়োজনের এ সময়কে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ক উপলক্ষে আলাদাভাবে দেখা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের নির্বাচন ও যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব এবং ভারতের সেতুবন্ধের ভূমিকা পুরো বিষয়কে ভিন্ন রূপ দিয়েছে। তাই ঢাকায় স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলোকে নয়াদিল্লিতে ঘোষিত বলে গণ্য করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জি২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ৮-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে লিডার সামিটে অংশগ্রহণের উদ্দেশে ভারত সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা, অ্যাম্বাসাডর-অ্যাট-লার্জ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর সংগঠন জি২০-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। এটি জি২০ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রধান ফোরাম। জি২০-এর সদস্যরা বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ এবং বিশ্ববাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ আর বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ইস্যুতে বৈশ্বিক কাঠামো গঠন ও শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আবদুল মোমেন বলেন, ভারত তার জি২০-এর সভাপতিত্বে বাংলাদেশসহ মোট নয়টি রাষ্ট্রকে জি২০-এর সব সভায় ‘অতিথি রাষ্ট্র (Guest)’ হিসেবে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও আরব আমিরাত। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান অনন্য সম্পর্কের ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এ সুযোগ লাভ করে; যা বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের বিষয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ভারত কর্তৃক আয়োজিত ১৮তম জি২০-এর সব সভায় অংশগ্রহণ করছে এবং বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ও সুপারিশগুলো তুলে ধরছে যা স্বাগতিক দেশ ভারতসহ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর কাছে প্রশংসিত হয়েছে। সফরসূচি অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী আজ বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে নয়াদিল্লি আসবেন। বিকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন, যেখানে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে বলে আশা করা যায়। কৃষি গবেষণা খাতে সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও দুই দেশের সাধারণ নাগরিকদের লেনদেন সহজীকরণের জন্য এ সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষর করা হবে। আজ সকালে জি২০ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রী জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘ওয়ান আর্থ, ওয়ান ফ্যামিলি, ওয়ান ফিউচার’-এর আওতায় প্রধানমন্ত্রী দুটি অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন। এ শিরোনামে দুটি অধিবেশনে তিনি বর্তমান বিশ্ব সম্প্রদায়, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা মহামারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইউরোপে যুদ্ধের ফলে জ্বালানি-খাদ্যপণ্য-সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার মতো যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তা মোকাবিলার বিষয়ে মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরবেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী আর্থসামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের অর্জিত অভাবনীয় সাফল্যের অভিজ্ঞতা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্বনেতাদের সামনে উপস্থাপন করবেন।

সফরসূচি অনুসারে আগামীকাল অনুষ্ঠেয় এ দুটি অধিবেশনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দেশের একাধিক নেতার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডন্ট এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। জি২০ সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষদিন প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। এরপর তিনি সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলনের শেষদিনে জি২০ নয়াদিল্লি ডিক্লারেশন গৃহীত হবে। ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরে যাবেন।

সোনিয়ার সঙ্গে বৈঠক ও মমতার সঙ্গে কথা : ভারতীয় কংগ্রেসের শীর্ষনেতা সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান হোটেল দি গ্রান্ডে সোনিয়া গান্ধী এসে দেখা করবেন। এ ছাড়া নরেন্দ্র মোদির আয়োজনে জি২০ শীর্ষনেতাদের নৈশভোজে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে কথা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

সর্বশেষ খবর