শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পদ্মা সেতুতে চলল ট্রেন

ঢাকা থেকে ভাঙ্গায় ট্রায়াল রান, উচ্ছ্বসিত দুই পারের মানুষ

আকতারুজ্জামান, ভাঙ্গা থেকে ফিরে

পদ্মা সেতুতে চলল ট্রেন

ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেনের ট্রায়াল রান হলো গতকাল -রোহেত রাজীব

পদ্মা সেতুর ওপর চলল বহুল আকাক্সিক্ষত ট্রেন। গতকালই প্রথমবারের মতো ট্রায়াল ট্রেন চালানো হয় পদ্মা সেতুর ওপর। পদ্মাপাড়ের মানুষের স্বপ্ন ছিল যে পদ্মা সেতুর, সে সেতুতে যুক্ত হতে যাচ্ছে আরেকটি মাত্রা। আগামী অক্টোবরেই এ সেতুতে নিয়মিত রেল চলাচল শুরু হবে। সেতুর ওপর রেল চলাচল নিয়ে পদ্মাপাড়ের মানুষের আগ্রহ আর উচ্ছ্বাসের যেন কমতি নেই। গতকাল ট্রায়াল ট্রেন পরিচালনার সময় দেখা মিলল তারই প্রতিচ্ছবি। রেল লাইনের দুই ধারে দাঁড়িয়ে ট্রায়াল ট্রেনকে স্বাগত জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। তাদের চোখে-মুখে ছিল উচ্ছ্বাস।

গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছয়টি বগি নিয়ে ট্রায়াল ট্রেনটি দুপুরে ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনে পৌঁছায়। ট্রেনটি কমলাপুর থেকে ভাঙ্গার উদ্দেশে রওনা করার পর দেখা গেছে, রেললাইনের দুই ধারে জড়ো হয়ে হাত নেড়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন সাধারণ মানুষ। সকাল সোয়া ১০টায় রওনা করে ট্রেনটি দুপুর সাড়ে ১২টায় ভাঙ্গা জংশনে পৌঁছায়। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশনে পৌঁছায়। এরপরই ওঠে পদ্মা সেতুতে। সব মিলিয়ে ৮২ কিলোমিটার রেলপথ পাড়ি দিতে ট্রেনটি সময় নেয় ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট।

ভাঙ্গা জংশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, রেলের সঙ্গে এ এলাকার মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে। এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা-ঢাকা রেলপথের উদ্বোধন করবেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল শুরু হবে। তিনি বলেন, আমরা রেল ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছি। প্রত্যেক জেলাকে রেলপথের সঙ্গে যুক্ত করা, মিটার গেজ ও ব্রড গেজের জায়গায় এক পদ্ধতির রেলপথ চালু করা, সিঙ্গেল লাইনকে ডাবল লাইন করা, রেলকে নদী ও সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করাসহ বিভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। আগামীতে বিদ্যুৎ-বাহিত রেল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, রেল এ দেশের সম্পদ, জনগণের সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। কোনো দুষ্ট লোক যাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। মন্ত্রী বলেন, রেলসেতু প্রকল্প আগামী বছরের জুনে শেষ হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে।

ভাঙ্গার বামনকান্দার বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ প্রতিবেদককে বলেন, পদ্মাপাড়ের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে পদ্মা সেতু। আর এ সেতুতে রেল চলাচল শুরু হলে আমাদের আনন্দের কমতি থাকবে না। এমন প্রাপ্তির জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। গতকালের পরীক্ষামূলক যাত্রার এ ট্রেন পরিচালনায় লোকোমাস্টার ছিলেন এনামুল হক এবং সহকারী লোকোমাস্টার ছিলেন এম এ হোসেন। গার্ড হিসেবে ট্রেন পরিচালনা করেন আনোয়ার হোসেন। পরীক্ষামূলক ট্রেনে রেলমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেনসহ অন্যরা। এ ছাড়া ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার, পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান ভাঙ্গা জংশনে অনুষ্ঠানস্থলে অংশ নেন।

রেল সংযোগ প্রকল্প সূত্র জানান, একেবারে শেষ পর্যায়ে পেঁৗঁছেছে এ প্রকল্পের কাজ। এর মধ্যে ঢাকা-মাওয়া সেকশনে কাজের অগ্রগতি প্রায় ৮১ শতাংশ, মাওয়া-ভাঙ্গা সেকশনে কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৯৭ শতাংশ, ভাঙ্গা-যশোর সেকশনে কাজের অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ ও ঢাকা-যশোর অংশে কাজ শেষ হয়েছে ৮২ শতাংশ।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রধান লাইনে ১৬৯ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়া লুপ ও সাইডিং ৫৪ কিলোমিটার, ঢাকা-গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি লাইনে প্রায় ৪ কিলোমিটারসহ মোট প্রায় ২২৭ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। এ রেললাইনের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তদেশীয় রেল যোগাযোগ উন্নয়ন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রেল নেটওয়ার্ক ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে সংযোজিত হবে। এর পাশাপাশি বিদ্যমান ভাঙ্গা-পাচুরিয়া-রাজবাড়ী সেকশনটি পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবে। ফাস্টট্র্যাকভুক্ত পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর