শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সংসদে ক্ষোভ

নকল ও মজুদে জেল জরিমানা বিল পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানহীন ও নকল কসমেটিকস বাজারজাত ঠেকাতে জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়েছে। বিদ্যমান ঔষধ আইনে কসমেটিকস শব্দটি যুক্ত করে ‘ঔষধ ও কসমেটিকস’ বিলে ওষুধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও বেশি মুনাফার লোভে মজুদ করলে ১৪ বছর জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কসমেটিকসের ব্যবসা করতে হলে ঔষধ প্রশাসন থেকে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলের ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা। তারা বাজারের ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ এবং লাগামহীনভাবে ওষুধের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সরকার জনস্বার্থে এ সব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তারা। বিলটি পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ওষুধের যে আন্তর্জাতিক মান রয়েছে সেই লেভেলটা আমাদের ঠিক রাখতে হবে। নিবিড় নজরদারি থাকতে হবে। স্যালাইনের দাম ১০০ টাকা নির্ধারিত থাকলে বিক্রি হয় ২০০ বা ৩০০ বা ৪০০ টাকায়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এগুলো করা হয়। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই দলের পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণই ঠিকমতো করতে পারছি না, এর সঙ্গে আবার কসমেটিকস? কেন আনা হলো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব যে কাজ সেটা ঠিকমতো করতে পারছে না। ওষুধের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে, কোনো ব্যবস্থা নেই। ওষুধ ও কসমেটিকস দুটা এক জায়গায় আনা হলো কেন? গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ওষুধ জীবন রক্ষার উপাদান। এই বিলটি এমনভাবে আনা হয়েছে যাতে জনস্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে। ওষুধ ও কসমেটিকস ভিন্ন জিনিস, কাজও ভিন্ন। কিছু মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য এটা করা হয়েছে। এতে ওষুধ উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। এর মধ্যে অসৎ উদ্দেশ্য আছে। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, কারও ব্যবসা ক্ষতি করার জন্য কসমেটিকস? বিষয়টি আমরা এখানে নিয়ে আসিনি। বহু দেশে আমেরিকা, ভারত, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডসহ বহু দেশে এই আইনটি এক সঙ্গে আছে। আমাদের উদ্দেশ্য কারও ক্ষতি করা নয়। প্রস্তুতকারীর অবৈধ সুবিধা দেওয়া নয়, আমাদের মানুষের স্বাস্থ্য যাতে ঠিক থাকে, মানুষের যাতে ক্ষতি না হয়। অনেক ধরনের ভেজাল কসমেটিকস ও ওষুধ তৈরি হচ্ছে, যেগুলো মুখে লাগানো হয় এবং বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়। এই কসমেটিকসে?র ব্যবহারের কারণে মানুষের স্কিন ক্যান্সার হচ্ছে, লিভার, কিডনি ফেইলর হচ্ছে, অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দোকানে আমরা যাব না, তাদের ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেসটা আমরা দেখব, ইমপোর্ট, এক্সপোর্ট প্রসেসটা দেখব। কিন্তু কোনো দোকানে দেবে এই বিষয়গুলো আমরা দেখব না। সর্বোপরি আমরা কসমেটিকসে?র পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমরা করব। পাস হওয়া বিলে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কসমেটিকস বিক্রি, আমদানি ও উৎপাদন করতে হলে লাইসেন্স নিতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর লাইসেন্স অথরিটি হিসেবে কাজ করবে। এখন যারা কসমেটিকসের ব্যবসা বা উৎপাদন করছেন তাদের লাইসেন্স নিতে হবে। এ জন্য ঔষধ প্রশাসন বিধি প্রণয়ন করবে। ১৯৪০ সালের ড্রাগস আইন ও ১৯৮২ সালের দ্য ড্রাগস কন্ট্রোল অ্যাক্ট-এ দুটোকে এক করে যুগোপযোগী করে এই বিল আনা হয়েছে। বিলে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর