সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পর্যালোচনা হবে দক্ষিণ এশিয়ার সুপারিশ

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

জি২০ নয়াদিল্লি ঘোষণাপত্রে প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো কার্যকরের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী নভেম্বরে পুনরায় শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করলেন। গতকাল সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণার সময়ে তিনি বলেন, ‘আগামী আড়াই মাস ভারতের হাতে সভাপতিত্ব করার অধিকার রয়েছে। এ কারণে নভেম্বরে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ফের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করা হবে।’ নয়াদিল্লিতে শীর্ষ সম্মেলনে যাঁরা আমন্ত্রিত ছিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই এতে যোগ দেবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নয়জন বিশেষ আমন্ত্রিত রাষ্টনেতা পুনরায় যোগদানের আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘নয়াদিল্লি সম্মেলনে অনেক প্রস্তাব এসেছে। সেসব বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করা হবে।’ তিনি পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতিত্বের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভার হাতে তুলে দেন। নিয়ম অনুযায়ী সভাপতির হাতুড়ি দিয়ে দেন।

নয়াদিল্লি শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে বিশ্বের দক্ষিণ গোলার্ধের রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে বহু ইতিবাচক প্রস্তাব রয়েছে। অন্যতম মুখ্য বিষয় যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জীবনযাত্রা অসহনীয় করে তুলেছে। এজন্য কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে হবে। শীর্ষ  সম্মেলনের ঘোষণাপত্রের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের অর্থ বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি গুণগত উন্নত হবে। ৮৩ নম্বর অনুচ্ছেদের ঘোষণাপত্রটি এই প্রথম সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। ঘোষণাপত্রের মূল নির্যাস হচ্ছে, বিশ্বদারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলো পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে। আর্থিক প্রবৃদ্ধি সুনিশ্চিতের সঙ্গে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যকে পুনরায় পুরনো গতিতে ফেরত আনা গেছে। জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের ঘটনায় ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ, বহুমুখী উন্নয়ন ব্যাংক (বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ) সংস্থাগুলোর সংস্কার করা, স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণের ফাঁদ থেকে উদ্ধার করা, লেনদেনে ডিজিটাল ব্যবহারকে প্রসারিত করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, লিঙ্গবৈষম্য দূর করা- এসব বিশ্বের দক্ষিণ গোলার্ধের রাষ্ট্রগুলোর দাবির স্বীকৃতি। জি২০ ঘোষণাপত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্মতি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতাকে উৎসাহিত করা। আলাপ-সহিষ্ণুতা অন্যতম মাপকাঠি। ধর্মীয় বিদ্বেষ ও প্রতীকী উপায়ে বিদ্বেষ ছড়ানো এবং ধর্মগ্রন্থের প্রতি অবমানানকে জি২০ নিন্দা করছে। এটা সব রাষ্ট্রকে মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মূল্যবৃদ্ধি রুখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে; যাতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে কোনো সংকট না হয়। এও বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষকে মূল্যবৃদ্ধি থেকে রেহাই দিতে প্রয়োজনীয় অর্র্থনৈতিক পলিসি নিতে হবে। আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে বৈষম্যমূলক নীতি ত্যাগ করে সুষম বাণিজ্যের সুযোগ করে দিতে হবে অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলোকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল থেকে দক্ষিণ গোলার্ধের রাষ্ট্রগুলোকে বাঁচাতে ধনী রাষ্ট্রগুলো অর্থ সাহায্য করার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ক্ষেত্রে সুষম নীতি অনুসরণ করবে। সব রাষ্ট্র সহমত হয়েছে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রত্যেকে বিষাক্ত বায়ু নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনবে। ডিজিটাল পরিকাঠামো তৈরি করতে ভারতের প্রস্তাবমতো আন্তর্জাতিক অভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফরম গড়ে তোলা হবে। যাতে ডিজিটাল ব্যবহার প্রসারিত করা যায়। আগামী এক দশকের মধ্যে ২০০ বিলিয়ন ডলার সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থ করবে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব বাস্তবায়নে পর্যালোচনার জন্য আগামী নভেম্বরে ভারত পুনরায় জি২০ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করছে।

সর্বশেষ খবর