শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

এডিসি হারুন সাময়িক বরখাস্ত

♦ ব্যক্তির দায় নেবে না পুলিশ : ডিএমপি ♦ ক্ষোভ-বিক্ষোভ অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

এডিসি হারুন সাময়িক বরখাস্ত

ছাত্রলীগের তিন নেতাকে নির্দয়ভাবে নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগ থেকে বদলি করা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার

(এডিসি) হারুন অর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এডিসি হারুন অর রশিদকে জনস্বার্থে সরকারি কর্ম থেকে বিরত রাখা আবশ্যক ও সমীচীন। তাকে সরকারি চাকরি আইনের (২০১৮ সালের ৫৭ নং আইন) ৩৯ (১) ধারার বিধান মোতাবেক ১১ সেপ্টেম্বর (২০২৩) থেকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

শনিবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) কক্ষে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানকে আটক করে নির্যাতন চালানো হয়। এই নিপীড়নের নেতৃত্ব দেন এডিসি হারুন অর রশিদ। ওই রাতে এবং পরদিন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নির্যাতনের ভয়াবহ ছবি প্রকাশ হলে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এডিসি হারুনকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়েছে। এর আগে বিকালে বলা হয়েছিল হারুনকে রমনা বিভাগ থেকে সরিয়ে ডিএমপি দাঙ্গা দমন বা পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে গতকাল দুপুরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফসহ ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে দেখা করে ছাত্রলীগ নেতাদের ওপর নির্যাতন চালানোর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন। ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন উপস্থিত সাংবাদিদের বলেন, যে অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, তাতে বাংলাদেশের সব শ্রেণির নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যাতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেটা নিশ্চিত করা হয়, সে জন্য আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (আসাদুজ্জামান খান) সঙ্গে দেখা করেছি। আজ (সোমবার) ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ডিএমপি কমিশনার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সর্বোচ্চ আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ভুক্তভোগী নেতাদের অভিযোগ, রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের সঙ্গে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঘটনার জেরে এডিসি হারুন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতাদের ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন আজিজুল হক।

ব্যক্তির দায় নেবে না পুলিশ : গতকাল ডিএমপি সদর দফতরে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, কোনো ব্যক্তির দায় পুলিশ নেয় না। ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর কাকে কতটুকু দায়ী করবে তার ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ চাকরিচ্যুত হতে পারে, কেউ তিরস্কারও হতে পারে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, ছাত্রলীগ নেতাদের নির্যাতনে অভিযুক্ত এডিসি হারুন অর রশিদকে শুধু প্রত্যাহার নয়, বরং তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে তারা এ দাবি জানান। এ সময় ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বলেন, এডিসি হারুনের আচরণ হলো মানসিক বিকারগ্রস্তদের মতো। দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে সে তার সহকর্মীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে না। কোনো জায়গা না পেয়ে সে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যভিচারের জন্য বারডেম হাসপাতালের মতো জায়গা বেছে নেয়। পুলিশের উচিত বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে মানসিক বিকারগ্রস্ত এ কর্মকর্তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করে আইনের শাসনকে সমুন্নত করা। ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি কামাল খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিশ সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। সেই বাহিনীর এক কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত আক্রোশবশত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে যেভাবে নির্যাতন করেছে এর দায়বদ্ধতা তার, পুলিশের নয়। পুলিশ কখনোই এর দায়ভার নেবে না। বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে তাকে জেলে ভরতে হবে। গাজীপুর ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি আশিক রাব্বানী জিহান বলেন, এডিসি হারুন যখন বুঝতে পেরেছেন, নাঈম ভাই তার অপকর্মের কথা ফাঁস করে দেবেন, তখন তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহনাজ আক্তার সুমি বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতা যেখানে নিরাপদ নন, সেখানে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা কতটা নিরাপদ সে প্রশ্নটা থেকেই যায়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, এডিসি হারুনকে সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি করে সব অন্যায়ের বিচার করেন। পুলিশের মতো সেবাধর্মী একটি প্রতিষ্ঠানকে যেন কলঙ্কিত হতে না হয়।

মানববন্ধনে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু, যুবলীগ সদস্য শেখ আহসান, সাবেক সহ-সভাপতি সোহান খান, মামুনুর রশিদ, কামাল খান, নজরুল ইসলাম প্রমুখ সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

সর্বশেষ খবর