বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার শঙ্কায় বিএনপির ৪০০ নেতা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার শঙ্কায় বিএনপির ৪০০ নেতা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন বিএনপির প্রায় ৪০০ নেতা। দলীয় শীর্ষ পর্যায় মনে করছে, সরকার পতনে এক দফা আন্দোলনরত জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেফতারের পাশাপাশি মামলার রায়ে নির্বাচনে অযোগ্য করা হবে। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় দেওয়া মামলাসহ অনেক মামলার কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বেশকিছু মামলা শেষ পর্যায়ে। এসব মামলায় বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, মধ্যমসারির ও তরুণ নেতারা আসামি। এঁদের অধিকাংশই সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। চলমান আন্দোলন দমানো এবং নির্বাচনে তাঁদের অযোগ্য করতেই সরকার দ্রুততার সঙ্গে মামলার কার্যক্রম শেষ করতে চাইছে বলে সংশ্লিষ্ট নেতাদের ধারণা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জেলে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, সরকারের বিরোধিতা করলেই কারাগারে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে তাঁকেও কারাগারে যেতে হতে পারে। যাঁরা সরকারের বিরোধিতা করছে, যাঁরা সরকারের পক্ষে নয়, তাঁদের সবাইকে কারাগারে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, আন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় হলেও তাঁদের শীর্ষ নেতারা যাতে নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন সেজন্য তড়িঘড়ি মামলার কার্যক্রম শেষ করার ব্যবস্থা করছে সরকার। দলের সক্রিয় নেতাদের টার্গেট করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। আর পুরনো মামলাগুলোও সক্রিয় করা হচ্ছে। অনেক মামলার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে আনা হয়েছে। সরকারের এ পরিকল্পনা ঠিক থাকলে এক-দুই মাসের মধ্যে বেশকিছু মামলা রায়ের পর্যায়ে চলে যেতে পারে। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাজনৈতিক এসব মামলা দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে। এতে সরকারের দুরভিসন্ধি রয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন। তাঁরা বলছেন, একেকজনের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৪০০ পর্যন্ত মামলা আছে। অনেক নেতা-কর্মীকে কর্মদিবসের প্রায় সব দিনই থাকতে হচ্ছে আদালতে। বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, দেড় লাখ মামলায় প্রায় ৪৯ লাখের বেশি আসামি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও দলীয় নেতাদের নামে মামলা দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার বিএনপি নেতাদের নামে দায়ের করা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চাইছে যাতে তাঁরা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হন। এ ক্ষেত্রে সরকার আদালতকে ব্যবহার করছে।

সম্প্রতি পুরনো দুটি নাশকতা মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভী, শিমুল বিশ্বাস, শামা ওবায়েদসহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন ঢাকার আদালত। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, গ্রেফতারের পর সহজে তাঁদের জামিন মিলছে না। জামিন মিললেও জেলগেট থেকে আবার পুরনো মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০০৭ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এক মামলায় গত ২ আগস্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে করা মামলায় সম্প্রতি বিচারিক আদালতে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নয় বছরের সাজা বহাল রেখেছেন হাই কোর্ট। পৃথক আরেক মামলায় দলটির আরেক নেতা আমান উল্লাহ আমানের ১৩ বছরের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। তাঁরা বলছেন, বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করতে এবং একতরফা নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সরকার প্রতিবারের মতো এবারও মামলা-হামলাকে বেছে নিয়েছে। রাজপথের শক্ত আন্দোলন ব্যাহত করতে নেতা-কর্মীদের আদালতপাড়ায় ব্যস্ত রাখা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, যেসব মামলা দ্রুত শেষ করে রায় দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে সেগুলো মিথ্যা, গায়েবি ও হয়রানিমূলক। মামলাগুলোয় ২ থেকে ৩ হাজার অজ্ঞাত আসামি রাখা হয়। বিরোধী দল দমন করতে আগে পুলিশ ব্যবহার করা হতো, এখন আদালত ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সরকার নিজেদের অবস্থা সংহত করতে বহু পুরনো মামলা দিয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের সাজা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আজ শুধু দেশ নয়, সারা বিশ্ব এ সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জানা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে ৯৩টি। আর সর্বোচ্চ ৪৫১টি মামলা হয়েছে দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে। আর দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা ৩৭টি। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে সাতটি, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে চারটি, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৪৮টি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ৩৬টি, নজরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে ছয়টি, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ছয়টি, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে নয়টি, সেলিমা রহমানের বিরুদ্ধে চারটি ও সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে। যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ৩১৩টি, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের নামে ৩০৫টি, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ২৫৪টি, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলুর বিরুদ্ধে ২০৪টি, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে ১৮০টি, নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবির বিরুদ্ধে ১৮৪টি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের বিরুদ্ধে ১৪৭টি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে ১০৬টি, নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসানের বিরুদ্ধে ১০৩টি মামলা রয়েছে। এখনো নিত্যনতুন মামলা যোগ হচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর