বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শেখ হাসিনার কূটনীতি নিয়ে আলোচনা সচিবালয়ে

কাজের মধ্যেই উঠে আসে নির্বাচনের প্রসঙ্গ

ওয়াজেদ হীরা

শেখ হাসিনার কূটনীতি নিয়ে আলোচনা সচিবালয়ে

ভারতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদান এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফর নিয়ে নানা আলোচনা এখন সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে। অনেকে শেখ হাসিনার এ বিচক্ষণতাকে নির্বাচনের আগে সফল কূটনীতি হিসেবে দেখছেন। কারও কারও ভিন্নমত রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা অফিসে কাজের মধ্যেই গল্পের ছলে করছেন এসব আলোচনা। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদের সেলফির বিষয়টি। কারণ, জো বাইডেন নিজের ফোনের ক্যামেরায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর কন্যার সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্টের সেলফি তোলার এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ছবিটি দেশে বিদেশে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী একাধিক গণমাধ্যমেও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপ, নানা ধরনের স্যাংশন আসবে দেশের ওপর- এসব নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছিল তখন দুই দেশের সরকারপ্রধানের এমন ছবি আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। গত তিন দিন সচিবালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার কক্ষে এসবই ছিল আলোচনার একমাত্র বিষয়। মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসা দর্শনার্থীকেও ওয়েটিং রুমে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। একজন সিনিয়র সচিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ব্যাচমেটদের সঙ্গে কথা তো হয়ই, আমার কাছে কয়েকজন সচিবও জানতে চেয়েছেন কূটনৈতিক নানা বিষয়ে। নির্বাচন সামনে হওয়ায় অনেকের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আগ্রহ থাকে। তবে এটুকু বলব, ওই সম্মেলনে আমরা যারা ছিলাম না, তারা ছবি বা আলোচনার মুহূর্তগুলো দেখে অনেক কিছু বুঝতে পারি। এটুকু বলব যে, প্রধানমন্ত্রী এখানে কূটনৈতিকভাবে সফল।’ সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তার রুমে তিনজন আড্ডায় নির্বাচন প্রসঙ্গ উঠলে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতের সফর নিয়ে অনেক কথা শুনতে ছিলাম, সফর তো ভালোই মনে হচ্ছে।’ আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিচ্ছে, কিন্তু ছবি ভিন্ন কথা বলে। মার্কিন বিষয়টি পুরো বুঝতে আসলে একটু সময়ও লাগবে।’ কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘হাস্যোজ্জ্বল ছবিটি প্রমাণ করে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কতটা সম্মান প্রদর্শন করেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেতাদের কাছে একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। জি২০ সম্মেলনে সেটা আরও বেশি প্রকাশ পেয়েছে।’ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের মহাসচিব রুহুল আমিন বলেন, ‘বিষয়টি খুবই পজিটিভ। কয়েকদিন ধরেই সচিবালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যেভাবে সম্মান প্রদর্শন করেছেন তাতে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ইমেজ বেড়েছে।’ সেলফি প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সেলফিটা দেখে ভালো লেগেছে, তিনজনের হাসিমাখা মুখ ছিল। এরকম ছবি দেখে কর্মকর্তারাও নিজেদের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা করতে পারেন। নাগরিক হিসেবে তাঁরা সার্বিক বিষয়ে চোখ-কান খোলা রাখেন।’ এ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বহুমাত্রিক সম্পর্ক আছে বলে উল্লেখ করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা ওয়েটিং রুমেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় সরব হন দর্শনার্থীরা। গতকাল কৃষিমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন টাঙ্গাইল থেকে আসা হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার কাজিন স্থানীয় সরকার বিভাগে আছে, এলাকার এক বড় ভাইয়েরও সচিবালয়ে পোস্টিং। যাদের সঙ্গে দেখা করেছি সবখানেই কমবেশি ঘুরেফিরে নির্বাচন নিয়ে কথা শুনলাম। প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে আলোচনা শুনলাম। সবখানেই আলোচনা ছিল প্রধানমন্ত্রীর সফল কূটনীতি।’ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সব সময়ই ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের পলিসি বোঝা মুশকিল।’ গতকাল সচিবালয়ের ক্যান্টিনে চায়ের অর্ডার দিয়ে রাজশাহী থেকে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা লতিফুর রহমান বলছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ছবিটা আলোড়ন তুলে দিয়েছে। বড় বড় দেশের নেতারা আমাদের দেশে আসতেছে। বিষয়টা ভাবতেই ভালো লাগে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সেলফির বিষয়টি ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়। সেলফিটাই যে আগামী দিনের নির্বাচনের রাজনীতির মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে সেটা মনে করার কারণ নেই। তবে সেলফিতে প্রমাণ করে দুই সরকারপ্রধানের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা, উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, সম্মান জানানোর বিষয়টি।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে অনেকেই নানামুখী কথা বলেছেন। ছবিতে যে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থা দেখা গেছে সেটা নিয়ে সব মানুষের মধ্যে আলোচনা হওয়াটা স্বাভাবিক।’

এদিকে ভারতে অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে নিয়েও। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফর নিয়েও অনেকেই ইতিবাচক আলোচনা করছেন। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ যেভাবে আন্তরিকতা প্রকাশ করেছেন তা সত্যি বিরল। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এ সফর বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করেছে।

সর্বশেষ খবর