বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কঠিন অবস্থায় আছি

কাজী হাবিবুল আউয়াল

কঠিন অবস্থায় আছি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা একটা কঠিন অবস্থায় আছি। সংকট আছে। আপনারা বলেন, আমরাও   অনুধাবন করি। সেই অনেকগুলো সংকট নিরসন করতে হবে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। গতকাল নির্বাচন ভবনে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। সিইসি বলেন, ‘কথাটি বারবার বলেছি, রাজনীতিবিদরা যদি আমাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে না দেন, তাহলে আমাদের পক্ষে নির্বাচন করাটা কষ্টসাধ্য হবে। আর পরিবেশ অনুকূল করে দেন আমাদের জন্য কাজটা সহায়ক হবে।’ নির্বাচন ভালো হবে কি না সেটি ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা’র ওপর নির্ভর করে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আন্তরিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। এটা আমার থেকে আসবে না। রাজনীতি থেকে আসতে হবে বা সরকার থেকে আসতে হবে। বারবার বলেছি একটা সমঝোতার কথা, আপনারা চায়ের টেবিলে বসুন। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমন হয়েছে, কেউ কারও সঙ্গে বসতে চাচ্ছেন না। দেশজ পদ্ধতিতে (সমাধান) এটা হতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক। সে ধরনের সিভিল সোসাইটি দেখতে পাচ্ছি না।’ সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত হওয়ার কথা জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর আগে কিন্তু সরকার কখনো এ প্রতিশ্রুতি দেয়নি। আইনমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী- উনারা ‘সরকার’ শব্দটা ব্যবহার করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও স্পষ্টভাবে কয়েকবার বলেছেন। সরকার আগামী নির্বাচনে নিশ্চয়তা দিচ্ছে। আমি বলব, আস্থা রাখতে চাই।’ সরকার ও দলকে সবসময় তালগোল পাকিয়ে ফেলা হয় বলে মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ‘বিভাজনটা বুঝতে হবে। সরকার ও দল ভিন্ন জিনিস। সরকারি দল বলতে কোনো শব্দ সংবিধানে নেই। এটা হয়তো মুখে বলে থাকি। যখনই একটা সরকার হয়ে যাবে, তখন সে সব দলের, সব জনগণের, পুরো দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে।’

‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এই কর্মশালায় সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সাবেক সচিব, সাবেক রাষ্ট্রদূত, সম্পাদক, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা অংশ নেন। এ সময় তিন নির্বাচন কমিশনার ও ইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সকালে শুরু হয়ে এই আলোচনা চলে প্রায় তিন ঘণ্টা। কর্মশালায় চারজন আলোচক, চারজন পর্যালোচক এবং বেশ কয়েকজন অতিথি অংশ নেন।

বৈঠকে আলোচক ও পর্যালোচক হিসেবে ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ূন কবীর, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। অতিথি হিসেবে ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক।

কর্মশালায় পর্যালোচক হিসেবে বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ধারণা, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনীর মাধ্যমে ইসি নিজেদের ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে। আরপিও সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন নিজেদের ক্ষমতা কেন কমাল। জনগণের প্রত্যাশা ছিল, সিইসির সক্ষমতা আরও বাড়বে। ইসির ক্ষমতা বাড়ার বদলে কমেছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষ হতাশ। এই বক্তব্যের মাঝখানেই কথা বলতে শুরু করেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সক্ষমতা কমিয়েছি, এটা সম্পূর্ণ অপপ্রচার। গণমাধ্যমের একটি বিষয় থাকে, ইসিকে খাটো করে দেখানো। জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। সারা দেশে প্রচার হচ্ছে, ইসি নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছে। ইসি মাথা নিচু করে সরকারের পক্ষে চলে গেছে, এটা মোটেই সত্য নয়।’ সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনের পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার পাঠানো প্রতিবেদন চোখ বন্ধ করে গেজেট করার বিধান ছিল। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে রিটার্নিং কর্মকর্তার পাঠানো প্রতিবেদন স্থগিত রেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে। অনেক সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পেশিশক্তির কারণে কেন্দ্রে অসহায় হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতি হলে তিনি পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ডাকবেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে কেন্দ্র থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চলে আসতে পারবেন। জনগণের মতের প্রতিফলন হবে না, পরিস্থিতি এমন হলে কেন্দ্র ত্যাগ করে চলে আসতে পারবেন। সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারেনি। সাধারণের ধারণা, সরকারকে জেতাতে দস্তখত করে ফেলেছে। এতটা কাউয়ার্ড (কাপুরুষ) হইনি। নৈতিকতা বিবর্জিত অতটা হইনি।’

সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেছেন, বাস্তবতা আপনাদের অনুকূলে নেই। সরকার না চাইলে কমিশনের পক্ষে ভালো নির্বাচন সম্ভব না। এখনো গাইবান্ধা নির্বাচনে দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর