শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
আজ গণভবনে আসছেন ৮ হাজার জনপ্রতিনিধি

ঐক্যের বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা

রফিকুল ইসলাম রনি

আজ সারা দেশের ৮ হাজার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আসবেন গণভবনে। এদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ মনোনীত সিটি মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া দল সমর্থিত ভাইস চেয়ারম্যান, সিটি কাউন্সিলররাও অংশ নেবেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র তিন মাস আগে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির এ মিলনমেলা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করছে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘ঐক্যের’ বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানা গেছে, দেশে প্রথমবারের মতো ‘স্থানীয় সরকার দিবস’ উদযাপন হতে যাচ্ছে। ‘সেবা ও উন্নতির দক্ষ রূপকার, উন্নয়নে-উদ্ভাবনে স্থানীয় সরকার’ স্লোগান নিয়ে আজ দিবসটি উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে গণভবনে দেশের ৮ হাজার জনপ্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে সাময়িক বরখাস্ত জনপ্রতিনিধি এবং যাদের নামে মামলা রয়েছে, তারা আমন্ত্রণপত্র পাননি। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে জনগণকে আরও সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের দাবি-সমস্যার কথা শুনতে হবে।

সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। জনসচেতনতা তৈরি এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে দিবসটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

অনুষ্ঠানসূচিতে রয়েছে : সকাল ১০টায় জনপ্রতিনিধিরা আসন গ্রহণ করবেন। ১১টায় স্থানীয় সরকার সচিব সূচনা বক্তব্য দেবেন। এরপর স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যক্রম নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হবে। এরপর প্রতিটি বিভাগ থেকে তিনজন করে জনপ্রতিনিধি বক্তৃতা করবেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করবেন। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সভাপতির বক্তব্য দেবেন। প্রধান অতিথি হিসেবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দিকনির্দেশনামূলক বক্তৃতা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকার দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের উন্নয়নগুলো স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হয়। আমরা বিগত সময়ে যে উন্নয়ন করেছি, সেগুলো যেন জনগণের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারি, সে দায়িত্ব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের। কারণ তারাই জনগণের কাছাকাছি থাকেন।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রতিনিধিদের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে আরও দায়িত্বশীল হওয়া, সরকারের অর্জনগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরার তাগিদ দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

জানা গেছে, উপজেলা পর্যায়েও উদযাপন করা হবে স্থানীয় সরকার দিবস। ১৬, ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর তিন দিনব্যাপী ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস উন্নয়ন মেলা’ আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন। মেলায় প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন সব দফতর ও সংস্থা সরকারের বাস্তবায়িত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরবে। মেলায় নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান জনগণকে প্রদেয় সেবাগুলো তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে এ আয়োজন করা হলেও এটা হবে সংসদ নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধির মিলনমেলা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধি সম্মেলন বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আগত জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান সরকার আমলে দেশের অর্থনীতিসহ সড়ক যোগাযোগ, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, গর্ভবতী ভাতা, ভিজিএফ, ভিজিডি, কম টাকায় চাল বিতরণসহ স্থানীয় পর্যায়ে যেসব উন্নয়ন হয়েছে সেগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কাজ করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানাবেন। এর আগে তিনি জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কথা শুনবেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধির মিলনমেলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই জনপ্রতিনিধিরাই জনগণের কাছাকাছি থাকেন, সরকারের উন্নয়নগুলো বাস্তবায়ন করেন। কাজেই নির্বাচন সামনে রেখে এ মিলনমেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু জায়গায় দলীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে অনৈক্য রয়েছে। সে অনৈক্য যেন আগামী নির্বাচনে প্রভাব না ফেলে, সে বিষয়ে সতর্ক করবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব মিলে ঐক্যের বার্তা দেবেন সরকারপ্রধান।’

বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান ড. হারুন অর রশীদ হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশের সব উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদের মেয়র এবং চেয়ারম্যানদের একত্র করার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সেবা নিশ্চিত করতে দিকনির্দেশনা দেবেন।’ কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মিলনমেলা নির্বাচনী বার্তা হিসেবেই দেখছি। কারণ সরকারের সব উন্নয়ন আমাদের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন হয়। নেত্রী যে নির্দেশনা দেবেন, সেই নির্দেশনা নিয়েই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করব।’ রাজধানীতে আগত জনপ্রতিনিধিদের স্বাগত জানাতে প্রবেশদ্বারগুলোয় সুসজ্জিত গেট নির্মাণ করবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া ফেস্টুন, বিলবোর্ড টানানো হচ্ছে। এলইডি বিলবোর্ডে বিশেষ ভিডিও প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশা নিধনে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে বলে উভয় সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর