বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

যেসব কারণে বাতিল অধিকারের নিবন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নানা অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, অসংগতি ও আইন অমান্য করে বিতর্ক তৈরির মাধ্যমে বহির্বিশ্বে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর নিবন্ধন বাতিল করেছে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর তদন্তে উঠে এসেছে, নবায়নের জন্য কাগজপত্র যথাযথভাবে দাখিল করেনি অধিকার। বৈদেশিক অনুদানে বাস্তবায়িত প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণেও অনুমোদন নেয়নি। ভ্যাট জমা দেয়নি। সরকারি প্রকল্পের কার্যক্রমে আর্থিক লেনদেনে অসংগতিও উঠে এসেছে ব্যুরোর তদন্তে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে কথিত গুম, খুনসহ বিচারবহির্ভূত বিভিন্ন হত্যার বিষয়ে অধিকারের ওয়েবসাইটে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ পেয়েছ ব্যুরো। অধিকারের দাখিলকৃত নিবন্ধন নবায়নের আবেদন, সংস্থার গত ১০ বছরের কার্যক্রম এবং সংস্থা কর্তৃক সময় সময় দাখিলকৃত ব্যাখ্যার সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংস্থার নিবন্ধন নবায়ন বিষয়ে ব্যুরোর চাওয়া তথ্য দাখিল করেনি অধিকার। এফডি-১ ফরমের ডিক্লারেশন এ প্রতি পাতায় সংস্থার সেক্রেটারির স্বাক্ষর প্রদান করার কথা থাকলেও তাতে শুধু প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর প্রদান করেছেন। ব্যুরোর নির্ধারিত ছকে প্রদত্ত নির্বাহী কমিটির তালিকায় সংস্থার প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির যৌথ স্বাক্ষর প্রদান করেনি এবং তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ হয়েছে বলে পত্র দিলেও নিয়োগকৃত ব্যক্তির তথ্য দেওয়া হয়নি। অধিকার কর্তৃক বৈদেশিক অনুদানে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ৮টি অডিট রিপোর্টের ওপর উত্থাপিত আপত্তির (পুরাতন টিওআর অনুযারী) রিপোর্ট দাখিল, অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণে ব্যুরোর অনুমোদন নেয়নি। নির্ধারিত ফরমে স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করেনি। দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর গাইডলাইন মোতাবেক তিনটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যুরো হতে সংস্থার কাছে জবাব চাওয়া হয়। সংস্থা জবাব দিলেও তা গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় সংস্থার কাছে অধিকতর তথ্যাদি চাওয়া হয়েছে, যার কোনো জবাব অদ্যাবধি ব্যুরোতে দাখিল করা হয়নি। সর্বশেষ অধিকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে কথিত গুম-খুনসহ বিচারবহির্ভূত বিভিন্ন হত্যার বিষয়ে সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইটWWW.od তে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করে। যা বহির্বিশ্বে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করে। এ বিষয়ে সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত টোটাল এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং (২০০৯-২০২১) এবং এনফোর্স ডিসঅ্যাপেয়ারেন্স (Enforced Disappearance) (২০০৯-২০২১) প্রতিবেদন ছকে উল্লেখিত সংখ্যক ব্যক্তির নাম ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা চাওয়া হলে সংস্থাটি মামলার রেফারেন্সে তথ্য প্রদানে অপারগতা প্রদান করা হয়। এনজিও ব্যুরোর প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্থা কর্তৃক ব্যুরোর চাহিত তথ্যাদি যথাযথভাবে না দেওয়া, বর্ধিত ফি ও ভ্যাট না দেওয়া, বৈদেশিক অনুদানে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ৮টি অডিট রিপোর্টের ওপর উত্থাপিত আপত্তির কোনো জবাব না দেওয়া, ৩টি প্রকল্পের কার্যক্রম সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেনে অসংগতি বিষয়ে ব্যুরোর চাহিত তথ্যাদি না দেওয়া এবং সংস্থা কর্তৃক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে কথিত গুম খুনসহ বিচারবহির্ভূত বিভিন্ন হত্যার বিষয়ে সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপ্রচার চালানো হয়; যা বহির্বিশ্বে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করে। এ সব কারণে সংস্থার সার্বিক কার্যক্রম সন্তোষজনক নয় মর্মে ব্যুরোর নিকট প্রতীয়মান হয়েছে। ফলে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অধিকারের নবায়ন আবেদন নামঞ্জুর করেছে।

সর্বশেষ খবর