শিরোনাম
শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আগুন নাকি নাশকতা নানা প্রশ্ন

শামীম আহমেদ

আগুন নাকি নাশকতা নানা প্রশ্ন

দাউ দাউ করে জ্বলছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বঙ্গবাজার, নিউ সুপার মার্কেটের পর এবার ভোররাতের আগুনে পুড়ল রাজধানীর আরও একটি মার্কেট। গতকাল দিবাগত ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে লাগা আগুনে ছাই হয়েছে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের শত শত দোকান। ভোররাতে যখন মার্কেটের সব কার্যক্রম ও বিদ্যুতের ব্যবহার বন্ধ থাকে, ঠিক তখন এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহ দানা বেঁধেছে বিভিন্ন মহলে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যে মার্কেটগুলো ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়েছে, একে একে সেই মার্কেটগুলোতেই আগুন লাগার ঘটনায় সন্দেহ দানা বাঁধছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থাহীনতা ও আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে এটা দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা? অন্যদিকে নির্বাচন সামনে রেখে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর নাশকতা হতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

এদিকে ভোররাতে রাজধানীর বড় বড় মার্কেটগুলোয় আগুন লাগার ঘটনা স্বাভাবিক মনে করছে না বিশেষজ্ঞ মহলও। সত্য সামনে আনতে তারা এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রতিবেদন     দ্রুত জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহম্মেদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিভিন্ন কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। বিদ্যুতের লাইনে ত্রুটি ছিল কি না, কোনো কেমিক্যাল ছিল কি না, বিদ্যুতের সব লাইন বন্ধ ছিল কি না, অগ্নিকাণ্ডের উৎসগুলো কোথায় কোথায়- এমন সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করতে হবে। তবে গভীর রাতে অথবা শেষরাতের দিকে মার্কেটগুলোয় অগ্নিকাণ্ড অবশ্যই সন্দেহের উদ্রেক করে। তাই নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এর সঠিক তদন্ত প্রয়োজন।

গতকাল ভোররাতে কৃষি মার্কেটে আগুনের খবর পেয়েই আশপাশে থাকা ব্যবসায়ীরা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। আগুনের প্রকৃতি দেখে তারা এটাকে নাশকতা বলেই মনে করছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভোররাতে হঠাৎ করে মার্কেটের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় হক বেকারিতে আগুন দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরেই উত্তর-পশ্চিম কোনায় আরেকটি দোকানে আগুন দেখা যায়। একই সময় দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে আরেকটি দোকানেও আগুন জ্বলতে দেখা যায়। পরিকল্পিতভাবে কেউ আগুন না লাগালে একসঙ্গে মার্কেটের শেষ প্রান্তের তিন কোনার তিনটি দোকানে আগুন লাগার কথা না। মার্কেটের ‘খ’ ব্লকের কাপড় ব্যবসায়ী জামাল বলেন, গতকাল ছিল মার্কেট বন্ধের দিন। এ জন্য আগের রাতে দোকান গুছিয়ে, নগদ টাকা নিয়ে বাসায় যাই। হঠাৎ রাত ৩টার দিকে মানুষের চেঁচামেচি শুনে ছুটে আসি। এসে দেখি তিন কোনায় তিনটি পৃথক দোকানে আগুন জ্বলছে। পরে চোখের সামনে তা সবখানে ছড়িয়ে পড়ে। একই ধরনের তথ্য দেন আরও অনেক ব্যবসায়ী। এমন পরিস্থিতিতে এই অগ্নিকাণ্ড নিছক দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কোনো কারণ রয়েছে এই প্রশ্নের জবাব পেতে চাইছেন অনেকে।

এর আগে গত বছরের ৮ জানুয়ারি কাপ্তান বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটিও ঘটে ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট সোয়া ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও পুড়ে ছাই হয় অনেক দোকান। গত এপ্রিলে ঈদের আগে রাজধানীর দুটি বড় মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে প্রায় একই সময়ে, ভোররাতের দিকে। অনেক মার্কেটে রাতেও আগুন লেগেছে। গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে আগুন লাগে ভোর ৬টা ১০ মিনিটের দিকে। পুড়ে ছাই হয় ৪ হাজারের বেশি দোকান। ১৫ এপ্রিল রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে। পুড়ে যায় প্রায় আড়াই শ দোকান। এ ছাড়া ১৩ এপ্রিল পুরান ঢাকার নবাবপুরে একটি গুদামে আগুন লাগে রাত ১০টার দিকে। সেখানে মার্কেটের প্রায় অর্ধশত দোকানের মালামাল রাখা ছিল। এর মধ্যে শুধু ১৭ এপ্রিল উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে বিজিবি মার্কেটে আগুন লাগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন গতকাল মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, গত রমজান মাসের পর রাজধানীতে যতগুলো মার্কেটে আগুন লেগেছে, এর অধিকাংশই সিটি করপোরেশনের মার্কেট। সিটি করপোরেশনের যে মার্কেটগুলো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যে মার্কেটগুলো পাকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, সেই মার্কেটগুলোই আগুনে জ্বলছে। বিষয়টি কি সন্দেহের জন্ম দেয় না? ক্ষোভ প্রকাশ করে হেলাল উদ্দিন বলেন, এগুলো পরিকল্পিত মার্কেট না, তা আমরা সবাই জানি। আমরা পাকা মার্কেট চাই, তার অর্থ এই না আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আমরা পাকা মার্কেট করব। ১৫ দিন আগে বললে আমরাই মার্কেট বন্ধ করতে সহযোগিতা করতাম। এখন ব্যবসায়ীদের এই ক্ষতি পূরণ হবে কীভাবে?

এদিকে মার্কেটটি অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল বলে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম গতকাল গণমাধ্যমকে বলছেন, কৃষি মার্কেটটি যে ঝুঁকিপূর্ণ, তা আগেই জানানো হয়েছিল তাদের। আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক কোনো সরঞ্জাম এই মার্কেটে পাওয়া যায়নি। নিয়ম বহির্ভূত দোকান ঘর করা, অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক লোড ব্যবহারসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে এই মার্কেটে। আগুনের পেছনে এই সব সমস্যা অন্যতম কারণ।

তবে কোনো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফায়ার সেফটি বাড়ানো কিংবা মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ এমন কোনো নোটিস ব্যবসায়ীরা পাননি দাবি করে ঢাকা মহানগর ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান টিপু বলেছেন, যদি কোনো দোকান ব্যবসায়ী এমন নির্দেশনা পেয়ে থাকেন, তাহলে আমরা মেনে নেব। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি সিটি করপোরেশনের মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ভোরে, যখন বৈদ্যুতিক ইউনিট ব্যবহার জিরোতে থাকে। এমন সময় আগুন লাগার ঘটনা অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর