শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
গণভবনে ৮ হাজার জনপ্রতিনিধি

মানুষ যেন ভোট দেয় পরিবেশ তৈরি করুন : প্রধানমন্ত্রী

মশা মেরে শেষ করা যাবে না, সচেতন হতে হবে, আবারও সুযোগ পেলে গ্রাম হবে শহরের মতো, কাঁচা রাস্তা থাকবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানুষ যেন ভোট দেয় পরিবেশ তৈরি করুন : প্রধানমন্ত্রী

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ যেন ভোট দেয়, সেই পরিবেশ তৈরি করতে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা তৃণমূলের জনগণের ভোটে নির্বাচিত সেবক। আপনারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করে মানুষের আস্থা অর্জন করে এগিয়ে যাবেন। মানুষ যেন আবার ভোট দেয়, সে পরিবেশ তৈরি করবেন। গতকাল দুপুরে গণভবনে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস-২০২৩ উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এবারই প্রথমবারের মতো উদযাপিত হচ্ছে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস। এ উপলক্ষে গতকাল বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর, পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ প্রায় ৮ হাজার জনপ্রতিনিধি অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ধারা ছিল বলেই গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। আবারও সুযোগ পেলে প্রতিটি গ্রামকে শহরের মতো গড়ে তোলা হবে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর স্থানীয় সরকারকে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ দিয়ে তৃণমূলে উন্নয়নের সুযোগ করে দিয়েছি। কষ্টের এ ফসল যেন কেউ নষ্ট করতে না পারে। অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, সেভাবেই কাজ করতে হবে সবাইকে। স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়নি, ব্যর্থ হতেও আমরা দেব না। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাটা বজায় রাখতে পেরেছি, যার জন্য গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নটা করতে পেরেছি। আমি জানি, এখনো অনেক গ্রামে কাঁচা রাস্তা আছে। সেগুলো আল্লাহর রহমতে থাকবে না। আবারও যদি জনগণের সেবা করবার সুযোগ পাই, নিশ্চয়ই আমরা সেগুলোও করে দেব। কারণ, প্রত্যেকটা গ্রাম শহরের মতো করে গড়ে উঠবে। জনপ্রতিনিধিদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবং মশার হাত থেকে বাঁচতে হলে মশারি ব্যবহার করতে হবে। আশপাশের ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। মশা মেরে শেষ করা যাবে না। নিজেরাও সচেতন হতে হবে। এ জন্য বাড়ির চারপাশ যেন পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন থাকে সে জন্য সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, শুধু বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন করাই নয়, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সব জায়গায় ফসল ফলাবেন। তাতে আপনারাই লাভবান হবেন। আমিও লাভবান হয়েছি। আমার মা-বাবার যে জমি ছিল, তার কিছু অংশ চাষ করেছিলাম। খরচ বাদেও ২ লাখ ২৭ হাজার টাকা আয় হয়েছে। ২৭ হাজার টাকা সবাইকে বিলিয়ে দিয়েছি। কাজেই নিজেরা ফসল ফলাব, নিজেরা খাব। কারও কাছে হাত পাততে হবে না। আমি অনুরোধ করব, আপনারা নিজেদের জমি চাষ করেন, গাছ লাগান, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছে খালেদা জিয়া। আজ কৃষকের ঘরে সার পৌঁছে যায়। তাদের কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। এটা দিয়ে কৃষি উপকরণ কিনতে পারে। ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এর মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছে যায়। জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল দিই। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ’৯৬ সালে ১৬০০ মেগাওয়াট ছিল। আমরা ৪ হাজার ৩০০ করে যাই। পরে বিএনপির আমলে কমে গেছে সেটা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এখন ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করি। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পায়। শিক্ষার্থীদের বই, বৃত্তি, উপবৃত্তি দিচ্ছি। ডিজিটাল সেন্টার করে দিচ্ছি। ইনকিউবেটর, হাইটেক পার্ক করে দিয়েছি। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ৭৩ শতাংশ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ঘরে ঘরে মোবাইল ফোন। সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করি। কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না। নানানভাবে তাদের এগিয়ে নেওয়ার কাজ করছি। প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, স্বামী পরিত্যক্তাদের ভাতা দিচ্ছি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বীকৃতি ও তাদের ভাতাও দিচ্ছি। ৫ কোটি মানুষের পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি। এটা দিয়ে মানুষ স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনকের আদর্শ নিয়ে সংবিধানে বর্ণিত পন্থায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, পৌর ও সিটি করপোরেশন আইন করে আমরা এগুলো নিয়ে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, ঘরে বসে চাকরির আবেদনসহ যাবতীয় সেবার কাজ করতে পারে মানুষ। অনলাইনে কেনাবেচাসহ সবকিছু হচ্ছে। আমরা তরুণ-তরুণীদের ফ্রিল্যান্সিং শিখাচ্ছি। সে এই ট্রেনিং নিয়ে বিদেশেও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করার সঙ্গে সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজ করছি। আমাদের যা সম্পদ আছে, তা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। ৭৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স করে দিয়েছি। ১ হাজার ১৯১টি সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ করেছি। গ্রাম পর্যায়ে অসংখ্য রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ কালভার্ট করে দিয়েছি। এখনো গ্রামে অনেক রাস্তা কাঁচা আছে, সামনে ক্ষমতায় এলে সেগুলোও থাকবে না। সব পাকা করে দেব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে গেছেন জাতির পিতা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে ক্ষমতায়ন করে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন। তখনই এলো আঘাত। জাতির পিতাকে সপরিবারে শাহাদাতবরণ করতে হয়। হারিয়েছিলাম বাবা-মা, ভাইবোন। পেয়েছি বিশাল জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের মানুষই আমার আপনজন। তারাই আমার সব শক্তি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত সারা দেশে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা করেছিল। আমি ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ করছি। শুধু মসজিদই নয়, মন্দির ও প্যাগোডা, যখন যেখানে যেটা দরকার করে দিয়েছি। সবাই এক কাতারে য্দ্ধু করে দেশ স্বাধীন করেছি। একসঙ্গে থাকব।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, নারায়ণগঞ্জের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, পিরোজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সালমা রহমান হ্যাপী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দুমকী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর রশীদ হাওলাদার, মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ম্যাব) সভাপতি ও নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, রংপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ববি, নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরীসহ ২৭ জন স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইবরাহীম।

প্রধানমন্ত্রী রবিবার নিউইয়র্ক যাচ্ছেন : জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে রবিবার নিউইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরকারপ্রধানের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়া নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল

মোমেন এ তথ্য জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, অন্য বছরের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করবেন। ২২ সেপ্টেম্বর সাধারণ বিতর্ক পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে তাঁর বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য খাতে সাফল্য বিষয়ের ওপর আলোকপাত করবেন। তিনি বলেন, পাশাপাশি, বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক সংকট, জলবায়ু, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসবে। পাশাপাশি প্রতি বছরের মতো এ বছরও সাধারণ বিতর্কপর্ব চলাকালীন কিছু উচ্চপর্যায়ের সভায় প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর