শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অধিকারের আদিলুর ও এলানের দুই বছর জেল

আদালতে ৪ দূতাবাসের প্রতিনিধি উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

নিজস্ব প্রতিবেদক

অধিকারের আদিলুর ও এলানের দুই বছর জেল

আদিলুর রহমানের মামলার রায় ঘোষণার দিন আদালত প্রাঙ্গণে বিদেশিরা

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলায় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এ রায় ঘোষণা করেন। ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনায় মিথ্যা তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচারের অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। রায় ঘোষণার পর আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে উভয় পক্ষই (আসামি ও রাষ্ট্র) উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।এদিকে রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া দূতাবাস ও হাইকমিশনের কর্মকর্তারা। কেন আদালত প্রাঙ্গণে এসেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি সাচা ব্লুমেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা রায় পর্যবেক্ষণ করতে এসেছি।’ রায়ের বিষয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আমরা শুধু পর্যবেক্ষক হিসেবে আদালতে এসেছি।’ এ রায়ের পর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। কারাগারে নেওয়ার আগে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় আদিলুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার পাইনি। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।’ তার আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন ভূঁইয়াও বলেন, বিচারিক আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাননি আদিলুর রহমান ও নাসির উদ্দিন। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ সাজায় আমরা সন্তুষ্ট নই। আসামিদের সাজা বৃদ্ধির জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।’ এ মামলায় ২৪ আগস্ট শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত রায় ঘোষণার জন্য ৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। তবে সেদিন আদালত রায় ঘোষণা করেননি। পরে রায় ঘোষণার জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বিকৃত তথ্য প্রচারের মামলায় অধিকারের আদিলুর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গ্রেফতার হন। পরে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ১১ আগস্ট আদালতের অনুমতি নিয়ে অধিকার কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে দুটি কম্পিউটার ও দুটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। সে বছরই ৪ সেপ্টেম্বর আদিলুর ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, আদিলুর ও নাসির উদ্দিন ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেন; আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেন। পাশাপাশি তারা মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করেন, যা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ও (২) ধারায় অপরাধ। এ ছাড়া আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালান, যা দণ্ডবিধির ৫০৫ সি ও ডি এবং ৫০৫ এ ধারায় অপরাধ। ওই মামলায় ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে ২০১৩ সালের ১০ জুন মানবাধিকার সংস্থা অধিকার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। এরপর ওই বছরের ১০ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয় অধিকারের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন ও ৬১ জনের নাম-ঠিকানা চেয়ে পাঠায়। এরপর অধিকার সেই চিঠির জবাবে হতাহতের কোনো তালিকা সরকারকে দেয়নি।

 

সর্বশেষ খবর