শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কেউ বাকরুদ্ধ কেউ ছাই হাতড়ে খুঁজছিলেন সম্বল

মাহবুব মমতাজী

ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকানে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে ছিলেন এক ব্যবসায়ী। তার পাশের দোকানে পুড়ে যাওয়া পণ্য থেকে সামান্য হলেও কিছু উদ্ধারের চেষ্টা করেন আরেকজন। সেখানে আগুনে পুড়ে গেছে জামা-কাপড়সহ আসবাবপত্র ও মোটরসাইকেল। দোকানের ওপরের টিনের চালাগুলোও পুড়ে গেছে। সামনের আরেকটি দোকানে পুড়ে গেছে খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য পণ্য। সব হারিয়েও আগুনে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপে নিজের স্বপ্ন খুঁজছিলেন কেউ কেউ। গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আগুনে পুড়ে যাওয়া কৃষি মার্কেটে দেখা গেছে এমন চিত্র।

এ অগ্নিকাণ্ডে সব হারিয়ে দিশাহারা অনেক ব্যবসায়ী। মার্কেটে সবজির দোকানের পাশাপাশি জুতার দোকান, স্বর্ণের দোকানসহ অনেক ধরনের দোকান ছিল। ব্যবসায়ীদের দাবি, মার্কেটের ভিতরের ফুটপাতে বসা অসংখ্য ছোট দোকানের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। ফলে মালামাল বের করতে পারেননি তারা।

চন্দ্রবিন্দু ফ্যাশনের মালিক কবীর হোসেনের দোকান পুড়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় কোটি টাকার। কবীর হোসেন বলেন, ‘যা বের করেছি, সেগুলো তো অচল। অচল পয়সা কতটুকু? টাকা ছিঁড়ে গেলে বা পুড়ে গেলে সে টাকা কি চালানো যায়? পোশাকে সামান্য ছিদ্র থাকলে সেটা কেউ নিতে চায় না। যা বের করেছি, সেগুলো চালানো মুশকিল। মালামাল ছিল প্রায় ৫০ লাখ টাকার। ডেকোরেশনসহ প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার দোকান ছিল, গোডাউন-ভরা মাল ছিল। এগুলো কে দেখবে? আমার বাসা কাছেই, সকালে শুনি কৃষি মার্কেটে আগুন লেগেছে। লুঙ্গি পরেই চলে এসেছি। ফায়ার সার্ভিস আসতে অনেক দেরি করেছে।’

আগুনের পর লুটপাট প্রসঙ্গে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘লুটপাট কারা করছে বলতে পারব না। কারা ফুটপাত বসায় সেটা বলতে পারব না। সবাই জানে, আপনারাও জানেন। গলিতে ছোট দোকানের ফলে কাস্টমার ঢুকতে পারে না। গলি ভুলে যায়। এখন অনেকেই আসছে। কিন্তু আমাদের এসব সমস্যা কেউ দেখতে আসেনি। আজ আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। এখন অনেকেই দেখতে আসছেন। এ দেখায় কোনো কিছু যায় আসে না।’

কবীর হোসেনের সঙ্গে কথা শেষে আশপাশে ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচাবাজারের প্রায় সব দোকানই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোথাও নিভুনিভু জ্বলছিল আগুন। কেউ কেউ পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে শেষ সম্বল হিসেবে তলানিতে থাকা চাল, আধাপোড়া আলু সংগ্রহ করছিলেন। খাজা চাল ভাণ্ডারের মালিক খোকন মিয়ার বলেন, ‘সব পুইড়া শেষ ভাই। আমার দোকানে মিনিমাম চাল-ডাল, আলু, পিঁয়াজসহ ১৫ লাখ টাকার মাল (পণ্য) ছিল। কিচ্ছু নাই।’ পাশের দোকানেই কয়েকজন পুড়ে যাওয়া টিলাসমান চালের স্তূপ থেকে কিছু ভালো চাল খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এ সময় কথা হয় জাকির মোল্লার চালের দোকানের মালিক জাকিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হায়রে ভাই! আমার সব শেষ ভাই। দোকানে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাল (পণ্য) ছিল। সব ধরনের চাল পাওয়া যেত আমার দোকানে। এখন কোনো চালই নাই। নগদও ছিল ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তাও পুইড়া শেষ।’

জানা গেছে, কৃষি মার্কেটে রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকে। তারপরও কীভাবে আগুন লাগল, এর কারণ খুঁজছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, হক বেকারি থেকে আগুনের সূত্রপাত। কিন্তু হক বেকারিতে ছিল না আগুন লাগার মতো কিছু। বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকার পরও মার্কেটে কেমন করে আগুন লাগে? আবদুল কাদির নামের এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় মার্কেটে শর্টশার্কিট হওয়ার সম্ভাবনা কম। কৃষি মার্কেটে কাপড়ের দুটি দোকান ছিল ফজলুল হকের। দোকানে ছিল প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার মালামাল। আর কয়েক লাখ নগদ টাকা। কিন্তু আগুনে সব পুড়ে এখন নিঃস্ব এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘কাল আমি চার লাখ টাকার মালামাল উঠেয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত চার টাকার মালও বিক্রি করতে পারি নাই। তার আগেই সব শেষ। কোনো কিছুই বের করতে পারিনি। কয়েক লাখ ক্যাশ টাকাও পুড়েছে।’ ফজলুল হক বলেন, ‘দীর্ঘ দুই যুগ ধরে এখানে ব্যবসা করছি। এভাবে দোকান পুড়ে গেল, কবে ঠিক হবে, কীভাবে চলবে, আবার কবে এখানে বসতে পারব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।’

 

 

সর্বশেষ খবর