রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়

রংপুর-দিনাজপুর তারুণ্যের রোডমার্চে মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক ও রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী প্রতিনিধি

সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়

রংপুর-দিনাজপুর বিএনপির তারুণ্যের রোডমার্চ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলার মাটিতে আর পাতানো নির্বাচন হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, শুধু বিএনপি নয়- দেশের সব রাজনৈতিক দল ও জোট ঘোষণা দিয়েছে- এ সরকারের অধীনে আর নির্বাচন নয়। এই সরকার বারবার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি অংশ নেবে। সেই দাবিতে আন্দোলন চলছে। দাবি না মানলে লাখ লাখ জনতার উত্তাল তরঙ্গে এই সরকার ভেসে যাবে। জনতার বিজয় অবশ্যম্ভাবী। গতকাল রংপুর থেকে দিনাজপুর যাওয়ার পথে ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ কর্মসূচিতে নীলফামারীর সৈয়দপুরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে সকালে রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে রংপুর যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত এই রোডমার্চের উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ-উন-নবী ডন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর বেলা সোয়া ১১টায় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে বিশাল ‘রোডমার্চ বহর’ নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে দিনাজপুরের দিকে রওনা হয়। হাজার হাজার মোটরসাইকেল, পিকআপ ও মাইক্রোবাসে করে নেতা-কর্মীরা নানা রংবেরঙের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে রংপুর-দিনাজপুর রুটের এই ‘তারুণ্যের রোডমার্চে’ অংশ নেন। পথে পথে বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত পথসভা থেকেও অসংখ্য নেতা-কর্মী যুক্ত হন। বিকাল ৪টার দিকে দিনাজপুর শহরের বটতলী এলাকায় ট্রাক টার্মিনাল মাঠে সমাপনী সভার মধ্য দিয়ে এই রোডমার্চ শেষ হয়।

সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার বারবার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। মানুষ ভোট দিতে গিয়ে দিতে পারেনি। অথচ আমাদের দেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল গণতন্ত্রের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পরিচালনা করার জন্য। দেশের লাখ লাখ মানুষ বিএনপির এক দফা আদায়ে মাঠে নেমেছে। জনগণের সরকার গঠিত হবে। তাই আমরা শপথ নিয়েছি এ সরকারের পতন ছাড়া ঘরে ফিরে যাব না। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে পরপর দুটো নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়ে যায়, চুরি হয়ে যায়, জনগণ ভোট দিতে পারে না এমন সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন করা যায় না। সে জন্য সারা দেশের সব রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। বিএনপি মহাসচিব দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা প্রসঙ্গে বলেন, গত (শুক্রবার) রাতে আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি অনেক অসুস্থ। এই সরকারের কাছে তাঁর (খালেদা জিয়ার) পরিবার ও চিকিৎসকরা বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য বারবার বলেছে। সরকার এসব কথা শুনছে না। অথচ বর্তমান স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী যখন বন্দি ছিলেন, তখন তিনি কানের অসুখের কথা বলে আমেরিকা গিয়েছিলেন। আজ তিনিই খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছেন না। অথচ তারা নিজেরা, তাদের চিকিৎসার জন্য বারবার বিদেশে যান।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চাল, ডাল, তেলের দাম ৩ থেকে ৪ গুণ বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের দাম বেড়ে গেছে অনেক। তবুও মানুষ বিদ্যুৎ পায় না। লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষক সেচ দিতে পারে না। আওয়ামী লীগের লোকেরা ব্যাংকগুলোতে দুর্নীতি করে সব টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। এই সরকার নিজেরা দুর্নীতির পাহাড় তৈরি করেছে। ফলে আজ দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, কৃষক নেতা নূরলদীন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রংপুর থেকে ‘জাগো বাহে কোনঠে সবাই’ ডাক দিয়েছিল, আজ তরুণ সমাজ সেই রংপুর থেকে লুটেরা-ফ্যাসিবাদকে রুখে দেওয়ার ডাক দিচ্ছে। এই রংপুরের ঐতিহ্য হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। এই রোডমার্চ শুরু হলো। যেদিন এই সরকারের পতন হবে, সেদিন তা শেষ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমাদের দাবি পরিষ্কার- পদত্যাগ করেন। আপনাকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আপনি সংসদ বিলুপ্ত করেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। জনগণ অংশগ্রহণ করবে। যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়ে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করবে। নতুন বাংলাদেশ গঠন করবে। তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, নির্বাচনের পর ৩১ দফার ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে রোডমার্চে আয়োজক তিন সংগঠনের শীর্ষ ছয় নেতা অংশ নেন। তারা হলেন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান এবং ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। এই রোডমার্চে পথে পথে অংশ নেন রংপুর বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তারুণ্যের রোডমার্চ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ ছয়টি স্থানে পথসভায় বক্তব্য রাখেন। স্থানগুলো যথাক্রমে রংপুর গ্র্যান্ড হোটেল মোড় বিএনপি অফিসের সামনে ছাড়াও রয়েছে রংপুর তারাগঞ্জ বাজার রোড, নীলফামারীর সৈয়দপুর রোড পাগলাপীর বাজার, সৈয়দপুর ট্রাকস্ট্যান্ড ময়দান সৈয়দপুর ওয়াপদার মোড়, দিনাজপুরের রানীরবন্দর। দিনাজপুর শহরের চিরিরবন্দর বাজারে রোডমার্চের সমাপনী সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব।

সর্বশেষ খবর