রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আবারও আসছে আইএমএফ

ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় নিয়ে হবে আলোচনা

মানিক মুনতাসির

আবারও আসছে আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের সঙ্গে চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত পরিপালনের অগ্রগতি দেখতে ও দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা করতে আবারও ঢাকায় আসছে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল। আগামী ৪ থেকে ১৯ অক্টোবর ঢাকা সফর করবে প্রতিনিধি দলটি। এ সময় তারা অর্থবিভাগ, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে। সেখানে আর্থিক খাতের সংস্কার কর্মসূচির অগ্রগতি, রাজস্ব ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, ব্যাংক খাতের সংস্কার, তারল্য ব্যবস্থাপনা, ডলারের বাজারভিত্তিক রেটে লেনদেন, ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি, সুদের হার ও মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করবে। অর্থবিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানান, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রকল্পের ৩৮ শর্তের একটি ছিল শর্ত বাস্তবায়ন করতে না পারলে ঋণের কিস্তি আটকে দিতে পারবে আইএমএফ। আরোপিত শর্তগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই পরিচালন করেছে সরকার। আর এতে ডলারের বাজারে চলছে অরাজকতা, ব্যাংক খাতের ঋণ খেলাপিদের ধরার ঘোষণা দিলেও ধরা সহজ হচ্ছে না। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ভর্তুকি কমাতে দাম বাড়ানো হয়েছে একাধিকবার। এতে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে। নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের। তবে কৃষি খাতের ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে সরকার অবশ্য তা মেনে নেয়নি। রাজস্ব আদায়ও বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনার ক্ষেত্রে সেখান থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের অর্থ বাদ দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো পরিপালন করছে না সরকার। এখানেই প্রধান বিপত্তি বাধতে পারে সংস্থাটির সঙ্গে। এটার পরিপালন ঠিকঠাক না হলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি আটকে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আপাতত আর কোনো ফান্ড গঠন করা হবে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি সহায়ক প্রাক-অর্থায়ন তহবিল বিষয়ক একটি চুক্তি সম্পাদন অনুষ্ঠানে তিনি এমন বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ ফান্ড থেকে দেওয়া অর্থ সমন্বয় করে এর আকার ধীরে ধীরে কমানো হবে। ইতোমধ্যে ইডিএফে ১ বিলিয়ন ডলার সমন্বয়ও হয়েছে বলে জানান তিনি। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি সহায়ক প্রাক-অর্থায়ন তহবিলে অংশ নেওয়া ৪৯টি তফসিলি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে অংশগ্রহণ চুক্তি করেছে। অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অব্যাহত এ ডলার সংকটে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য ঋণের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া শর্ত খতিয়ে দেখতে আগামী মাসে ঢাকায় আসছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। সংস্থাটির এ সফরসূচি সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংককে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনার সূচি নির্ধারণ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও স্টক মার্কেটের কাছ থেকে শর্ত ও পরামর্শ বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য আজকের (১৭ সেপ্টেম্বর) মধ্যে পাঠাতে বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে ফিরে গিয়ে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করবে সংস্থাটির সদর দফতরে। তাদের ওই প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়। কোনো কারণে শর্ত পূরণ বিলম্ব হলে দ্বিতীয় কিস্তিও বিলম্ব হতে পারে। শর্ত পূরণ হলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করা হতে পারে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭৬ মিলিয়ন বা ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। শর্ত পূরণসাপেক্ষে এ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার ছাড় করা করবে আইএমএফ।

এর আগে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের একটি যৌথ প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে গত ৫ থেকে ১৭ জুলাই। দেশের আর্থিক খাতের সংস্কার ও গতিপ্রকৃতি এবং আইএমএফের দেওয়া সংস্কার কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে তারা পর্যবেক্ষণ করে। সেটি ছিল মূলত একটি কারিগরি টিম। এজন্য তারা বিষয়গুলোর মূল্যায়ন, পর্যালোচনা, অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি তিনটি কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন দেয় আইএমএফ। সেগুলো হচ্ছে এক্সটেনডেন্ট ক্রেডিট ফ্যাসিলিলিট (ইসিএসফ), এক্সটেনডেন্ট ফাইনান্স ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এবং রেজিলেন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)। প্রত্যেকটি ঋণ কর্মসূচির গ্রেস পিরিয়ড ও পরিশোধকাল ভিন্ন ভিন্ন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর