সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
নির্বাচনী ভাবনা - মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

সংবিধানের দোহাই দিয়ে অস্থিতিশীলতা

শামীম আহমেদ

সংবিধানের দোহাই দিয়ে অস্থিতিশীলতা

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে, তার সুযোগ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। তারা সরকার পরিবর্তনের ভয় দেখিয়ে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে, যা দেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে এই অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। তাদের উচিত নির্দলীয় তদারকি সরকারের হাতে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া। এটাই সবাই চাইছে। এটাই একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধান। অন্যথায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের ক্ষতি হতে পারে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলাপকালে বর্ষীয়ান এই কমিউনিস্ট নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে, তদারকি সরকারের বিধান সংবিধানে নেই। কিন্তু, সংবিধান সংশোধনের বিধান তো সংবিধানে আছে। সেই বিধান প্রয়োগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব। আমি রূপরেখা বলে দেব। আমি এরশাদের সময় নির্বাচনের রূপরেখা প্রণয়নের প্রধান কারিগর ছিলাম। কত তারিখে কীভাবে কী করতে হবে, কীভাবে সরকার পদত্যাগ করবে, সবকিছুর রূপরেখা দেব। কিন্তু, সেই ইচ্ছা সরকারের থাকতে হবে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হচ্ছে যে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, আর স্থিতিশীলতার জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। অর্থাৎ, একই সরকার একাধিকবার যাতে থাকে এটা নিশ্চিত করতে হবে। এর অর্থ দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যেই বলে দিচ্ছে যে, তারা যে উন্নয়ন করছে, সে জন্য তাদেরকে চিরদিন ক্ষমতায় রাখা প্রয়োজন। কিন্তু, বাস্তবতা হলো তারা এমন সব কাজ করছে যা স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার বদলে দেশকে সম্পূর্ণভাবে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। মানুষ আজ অনিশ্চিত অন্ধকারের ভিতরে যাত্রা করছে। চারদিকে শুধু কী হবে? কী হবে? সবার মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা। আর এই অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার সুযোগ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। তিনি বলেন, তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে একটা ঐতিহাসিক বক্তৃতা হয়েছিল। সেই বক্তৃতায় বলা হয়েছিল, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমি মানুষের অধিকার চাই’। এখন আমাদের দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তৃতা হয়ে গেছে, ‘আমি জনগণের অধিকার চাই না, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই’। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ মন্তব্য করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশে এখন লুটপাটের রাজত্ব চলছে। এটা বজায় রাখতে একপক্ষ যেনতেন উপায়ে ক্ষমতা ধরে রাখার ফন্দিফিকির করছে। আরেকপক্ষ লুটপাটের ভাগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করছে, কিন্তু লুটপাটের ব্যবস্থা পরিবর্তনের কথা বলছে না। তাদের দাবির মর্ম কথা হলো- ওরা একা কেন লুটপাট করবে, আমরাও ভাগীদার হতে চাই। জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে হলে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন যেমন প্রয়োজন, ভোটের অধিকার যেমন প্রয়োজন, তেমনি তাদের ভাতের অধিকারও নিশ্চিত করতে হবে। সেটা করতে হলে বর্তমানে চলমান বাজার অর্থনীতিভিত্তিক লুটপাটের ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সমাজতন্ত্রমুখী রাষ্ট্র, তথা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে যে পথ তৈরি হয়েছিল, সেই পথে যেতে হবে। প্রবীণ এই বাম নেতা বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো এক তরফা নির্বাচন এবার সম্ভব না। আওয়ামী লীগের ওপর মার্কিন চাপও রয়েছে। আমেরিকার এজেন্ডা ভোটাধিকার না, চীন ঠেকাও। তারা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। তারা দেখবে কে ক্ষমতায় থাকলে তাদের স্বার্থ রক্ষায় সুবিধা হবে। এ জন্য আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনী কৌশল বদলাতে পারে। বিএনপিও হয়তো কৌশল বদলাবে। আগে তারা আগুন দিয়ে জ্বালাও-পোড়াও করেছিল, এবার অহিংস পথে থাকতে পারে। কিন্তু, নির্দলীয় তদারকি সরকার ছাড়া অস্থিতিশীলতা কাটবে না। আওয়ামী লীগের লোকজনই বিশ্বাস করে না যে, দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। আর নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে সিপিবিও অংশ নেবে না।

সর্বশেষ খবর