মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
নির্বাচনী ভাবনা

সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ রসাতলে

খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া

শামীম আহমেদ

সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ রসাতলে

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া বলেছেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পর দেশে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা স্বাধীন দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর তো বটেই, গণতন্ত্র চর্চা বা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ যে কতটা রসাতলে গেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে জনগণের শাসন পরিচালনার অংশ হিসেবে নির্বাচন, সে জনগণের কোনো খবর নেই, বাইরের লোকের মাথাব্যথার শেষ নেই। বিবদমান দুই পক্ষ চর দখলের মহড়ায় নেমেছে। বিদেশিরা এসে ভিড় জমিয়েছে। সেক্ষেত্রে কেমন নির্বাচন আশা করা যায়? আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করতে গিয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি কথাগুলো বলেন। সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির এ বর্ষীয়ান নেতা বলেন, যে বিষয় নিয়ে এখন তর্কবিতর্ক চলছে, তা মামুলি বিষয় হলে কথা ছিল না। যেমন, নির্বাচনের তারিখ, আয়োজন, ভোট কেন্দ্রের শৃঙ্খলা ইত্যাদি। কিন্তু বিষয় দাঁড়িয়েছে এগুলোর ঊর্ধ্বে। অর্থাৎ, ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, এ কথা ক্ষমতাসীনদের বাইরের সব দল এবং জনগণের মনে একভাবে গেঁথে গেছে। অতীতের ১১টি সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সাতটি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে, সবকয়টি প্রশ্নবিদ্ধ থেকেছে, কারচুপি হয়েছে এবং প্রতিটিতেই ক্ষমতসীনরা পুনরায় ক্ষমতায় ফিরেছে। চারটি নির্বাচন তদারকি সরকারের অধীনে হয়েছে, প্রতিটাতেই ক্ষমতার বদল ঘটেছে। এতে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল কি না সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কারণ নির্বাচন গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম অঙ্গ হলেও বিদ্যমান শাসনব্যবস্থা যদি স্বৈরতান্ত্রিক জমির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে শুধু নির্বাচনের ফলাফলে তার আমূল পরিবর্তন ঘটে না। কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন বা জনসন্তুষ্টিমূলক কিছু কর্মকাণ্ড হয়তো নতুনভাবে যুক্ত হয়। গণতান্ত্রিক শাসনের জন্য গণতান্ত্রিক প্রথা-প্রতিষ্ঠান, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদি জরুরি।

খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, উপনিবেশিক ধাঁচের আমলাতন্ত্র থাকলে তা কামলাতন্ত্রে পরিণত হতে বাধ্য। ১৮৬১ সালের বিধানে যদি পুলিশবাহিনী গঠিত এবং পরিচালিত হয়, তা শাসকদের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হতে বাধ্য। মুক্তবাজারি লাগামহীন পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থাকলে অর্থনীতি বৈষম্যসৃষ্টিকারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। আইন গণতান্ত্রিক না হলে, কালো আইনকে স্বীকৃতি দিলে কথিত আইনের শাসনের নামে স্বৈরশাসনই প্রতিষ্ঠা পায়। বিচারব্যবস্থাকে নির্বাহী ক্ষমতার অধীনে রেখে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা কল্পনা করা কঠিন। সংবিধানের মূল ভিত্তির মূলোৎপাটন করে সংবিধানের দোহাই দেওয়া যে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার কূটচাল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ হলেই কেবল বামপন্থিরা নির্বাচনে যাবে, অন্যথায় নয়। তিনি বলেন, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চেতনাকে শাসকশ্রেণিভুক্ত দলগুলো বিসর্জন দিয়েছে। ফলে রাজনীতি দুর্বৃত্তায়িত হয়েছে এবং দুর্বৃত্তদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা চলে গেছে। এ শক্তিকে ব্যবহার করে পার্লামেন্ট ব্যবসায়ীদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। এগুলোর পরিবর্তন নিয়ে ক্ষমতার মধুচক্র দখলমুখীরা ভাববে না। ফলে এক একটা নির্বাচন আসে আর জনজীবনকে সংকট থেকে গভীরতর সংকটে নিয়ে যায়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে না। একমাত্র জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শক্তিই পারে এ পরিস্থিতির মোড় ঘোরাতে। সরকার গণ আকাক্সক্ষা মেনে নিলে ক্ষতি কম হবে। অন্যথায় এবারের ক্ষতি এমন বড় দুর্গতির পথ রচনা করবে, যেখান থেকে ফেরা কঠিন হয়ে যাবে। অতীত অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে শাসক ও শাসনব্যবস্থা দুটোকেই পরিবর্তন করা না গেলে আন্দোলনের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছায় না। প্রথমে নির্বাচনের জালজালিয়াতি ঠেকানোর ব্যবস্থা ও পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে সমাজ বদলের স্তরে তোলার ধারাবাহিক লড়াই এগিয়ে নেওয়া সময়ের দাবি। এ কাজ যে বুর্জোয়া ধনিকশ্রেণির দল দিয়ে হবে না, তা গত ৫২ বছরে প্রমাণ হয়েছে। এ জন্য বাম বিকল্প শক্তির উত্থান জরুরি। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনায় জনগণকে জেগে উঠতে হবে।

 

সর্বশেষ খবর