মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
ঢাকায় টিকফা বৈঠক কাল

ডব্লিউটিওর সুবিধা নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চায় বাংলাদেশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত ফোরাম-টিকফায় এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও এবার কৌশল পাল্টাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রচলিত জিএসপি ছেড়ে এবার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-এর বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আলোচনার ইস্যুতে বদল এনেছে যুক্তরাষ্ট্রও। শ্রম ইস্যুর পাশাপাশি তারা বাংলাদেশের কৃষিতে অগ্রাধিকার চাইছে। দুই দেশের এসব চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আগামীকাল ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টিকফার বৈঠক।

এবারের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেশটির বাণিজ্য দফতর ইউএসটিআর-এর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ক্রিস্টোফার উইলস। বৈঠকের আগে গতকাল টিকফার ইস্যু নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় তপন কান্তি ঘোষ এই প্রতিবেদককে বলেন, এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের পরও বাংলাদেশ ডব্লিউটিওর বাণিজ্য সুবিধা আরও কয়েক বছর অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাবটি যাতে অনুমোদিত হয়, সে লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চাই আমরা। টিকফা ফোরামে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই ইস্যুটিতে জোর দেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া : এবারের টিকফা ফোরামে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি খাত, শ্রম খাত, বিনিয়োগ, ডিজিটাল বাণিজ্য, মেধাস্বত্ব ও কাস্টমস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছর টিকফা ফোরামে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান চাওয়া ছিল তোলা আমদানির ক্ষেত্রে বন্দরে বাষ্পীকরণ প্রত্যাহার করা। দীর্ঘ আলোচনায় অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি সরকার ঘোষণা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তোলা আমদানিতে বন্দরে আর কীট নিরোধক বাষ্পীকরণ করতে হবে না। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা বাষ্পীকরণ করেই তোলা রপ্তানি করে। ফলে এবারের বৈঠকে ওই ইস্যুটি বাদ পড়েছে। তার বদলে এবার কৃষিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে দেশটি। বিশেষ করে বাংলাদেশের কৃষিতে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারে অংশীদারিত্ব সংলাপ চায় দেশটি। এ ছাড়া আমেরিকান কাঠবাদাম ও আখরোটের শুল্ক কমানো; বীজ আমদানি-রপ্তানি সহজীকরণ ও বীজ আইনে মেধাস্বত্বে¡র অন্তর্ভুক্তিকরণের ইস্যুটিও আলোচনায় তুলবেন ইউএসটিআর প্রতিনিধি।

বাংলাদেশের ইস্যু : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশ ৪টি ইস্যুকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ১) ডব্লিউটিওতে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা পেতে মার্কিন সমর্থন, ২) যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা, ৩) যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন তহবিল থেকে অনুদান পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের নাম তালিকাভুক্তিকরণ এবং ৪) এনার্জি খাত ছাড়াও বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং ও শিল্প খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড রয়েছে, সেখান থেকে তহবিল পেতে গেলে তালিকাভুক্ত হতে হয়। আমাদের চাওয়া হবে, বাংলাদেশকে সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর গড়ে ১৫ দশমিক ১ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করা হয়। এটি অন্য দেশগুলোর তুলনায় বেশি। সরকারের দাবি থাকবে, যাতে অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর কম শুল্ক আরোপ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শ্রম ইস্যুতে ২০১৩ সালে জিএসপি সুবিধা স্থগিতের পর গত কয়েকবছর এই সুবিধা পুনর্বহাল করার বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্ব দিয়েছে। টিকফার বৈঠকে এই ইস্যুতেই আলোচনা চালিয়ে গেছে। তবে চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এখন এটির গুরুত্ব হারিয়েছে। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটলে তখন এমনিতেই আর জিএসপি সুবিধা পাওয়া যাবে না। সে কারণে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে চোখ রেখে বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জিএসপির বদলে যে কোনো নামেই হোক বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার দিকেই নজর সরকারের। সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ বিশেষ সুবিধা দিয়েছে দেশটিকে। সেই সুবিধার পরিবর্তে এবার বাংলাদেশও চাইবে বিশেষ সুবিধা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় তৈরি পোশাক দেশটির বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশটি যাতে আমদানি শুল্কের পরিবর্তে, কেবল ভ্যাট আরোপ করে- সেই সুবিধা চাওয়া হতে পারে। তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমরা তাদের দিয়েছি (যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে বিশেষ সুবিধা)-এবার আমাদের চাওয়ার পালা।

সর্বশেষ খবর