বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নেতা-কর্মীদের ঢাকামুখী করবে বিএনপি

♦ তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালেই টানা কর্মসূচি ♦ আসতে পারে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাওসহ অবরোধ হরতাল গণ অবস্থান

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

নেতা-কর্মীদের ঢাকামুখী করবে বিএনপি

সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে নেতা-কর্মীদের ঢাকামুখী করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। তারই অংশ হিসেবে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় সমাবেশ-গণসংযোগসহ ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে দলটি। আন্দোলনে গতি সঞ্চারের পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করাই মূল উদ্দেশ্য। আগামী মাসকে চূড়ান্ত আন্দোলনের টার্গেট করেই সব কর্ম-পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোচ্ছে রাজপথের এই প্রধান বিরোধী দল। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই শুরু হবে টানা কর্মসূচি। কর্মসূচি নিয়েও দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। এতে নির্বাচন কমিশন, সচিবালয় থেকে শুরু করে গণভবনসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাও কর্মসূচি আলোচনায় এসেছে। ঘেরাও কর্মসূচির বাইরেও লাগাতার হরতাল, অবরোধ, গণঅবস্থানসহ সর্বশেষ অসহযোগ কর্মসূচির প্রস্তাবও এসেছে। নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে সর্বসম্মতিক্রমে আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। সময়মতো তিনিই জানিয়ে দেবেন আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালেই এক দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তি ঘটাতে চায় বিএনপি। বিগত সময়ের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে এবার রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করেই মূল কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত সমমনা জোট ও দলগুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশে মানুষ জেগে উঠেছে। নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি না মানলে রাজপথেই তার ফয়সালা করা হবে। যে কোনো স্বৈরাচারী সরকার হঠানোর একমাত্র পথই হচ্ছে রাজপথ। সরকার যদি নিজে উদ্যোগী হয়ে দাবি মেনে না নেয়, তাহলে গণআন্দোলনেই এর সমাধান করা হবে। এদিকে দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে আন্দোলনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে গত শনিবার রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার এবং পরদিন রবিবার বগুড়া থেকে রাজশাহী পর্যন্ত রোডমার্চ করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এদিকে কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গীসহ ঢাকার আশপাশের কয়েকটি এলাকায় একটি করে এবং ঢাকায় তিনটি বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও ঢাকায় পেশাজীবীদের সমাবেশ, নারী ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকেও পৃথক সমাবেশের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে চারটি রোডমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজার থেকে সিলেট অভিমুখে রোডমার্চ করবে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এতে নেতৃত্ব দেবেন। আগামী মাসে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে রাজপথ দখলে নিয়ে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করতে যা যা করা দরকার তার সবই করার প্রস্তুতি নেবে বিএনপি। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে সর্বশেষ- গত ২৯ জুলাই রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর এবার চোখ খোলা রেখে সতর্কভাবে পা ফেলতে চায় আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা এই বিরোধী দল। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দুই মাস ধরে রাজপথে আন্দোলন করছে বিএনপি। এরই মধ্যে এক দফা দাবিতে ছোট-বড় ২৬টি কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। বর্তমানে দেশব্যাপী ১২ দিনের টানা কর্মসূচি পালন করছে দলটি। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রাজধানী ঢাকাকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ বিষয়ে বলেন, সরকার হটানোর আন্দোলনে বিএনপি সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- এবারের আন্দোলনে সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ যুক্ত হয়েছেন। তারা আর এই কর্তৃত্ববাদী সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলছে। রাজধানীসহ সারা দেশের সব জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মীদের একত্রিত করে তা সফল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি।

সর্বশেষ খবর