বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জ্ঞান ফেরেনি ভুবনের উৎকণ্ঠায় স্ত্রী সন্তান

সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত আইনজীবী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলিতে আহত মোটরসাইকেল আরোহী আইনজীবী ভুবন চন্দ্র শীল লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। এই ঘটনায় তার স্ত্রী রত্না রানী শীল বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। গতকাল তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলায় অজ্ঞাত ছয়/সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলো পর্যালোচনা করে আসামিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। অভিযান চলমান রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি।

সোমবার রাতের এই ঘটনার পর থেকেই পুলিশের পাশাপাশি, ডিবি, পিবিআই, সিআইডি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ছায়াতদন্ত করছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্যের দ্বন্দ্বের জেরেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, ঘটনার পরই তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের ওই ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। এসব ফুটেজ পর্যালোচনা করে এরই মধ্যে একাধিক হামলাকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক জানিয়েছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হামলার সময় সঙ্গে থাকা মামুনের দুই সহযোগীকে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সন্ত্রাসী মামুনকে কুপিয়ে আহত করা হলেও তার দুই সহযোগী মিঠু ও খোকন অক্ষত ছিলেন। এমনকি তারা প্রতিরোধও করেনি। হামলার পরপরই মামুনের সহযোগী মিঠু ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আর খোকন থানায় গিয়ে খবর দেয়। পুলিশ খোকনকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া নজরদারিতে রয়েছেন আহত শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনও। সন্ত্রাসী মামুন তার ওপর এই হামলার নেপথ্যে তারই এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কারাগারে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকেই দায়ী করেছেন। তিনি ঘটনার পর পুলিশকে জানিয়েছেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার সঙ্গে দেখা হয় ইমনের। এ সময় ইমন তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এ বিষয়ে মঙ্গলবার ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, ইমন-মামুনের দ্বন্দ্বের জেরেই এই হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে তেজগাঁও বিজি প্রেস ও পেট্রল পাম্পের মাঝামাঝি স্থানে শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনের প্রাইভেটকার লক্ষ্য করে চারটি মোটরসাইকেলে আসা সাত-আটজন যুবক গুলি ছোড়ে। সেই গুলিতে আহত হন আইনজীবী ভুবন চন্দ্র শীল। এ ছাড়া আরিফুর নামে আরেক পথচারীও আহত হন। আর দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় মামুনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আইনজীবী ভুবন দুই দিন ধরে পপুলার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। তার এখনো জ্ঞান ফেরেনি। আর জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত অস্ত্রোপচারও সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এমন অনিশ্চয়তা নিয়েই একমাত্র মেয়ে ভূমিকা চন্দ্র শীলকে নিয়ে দুই দিন ধরে হাসপাতালে স্ত্রী রত্না রানী শীল। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। এমন পরিস্থিতিতে ভুবনের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। লাইফ সাপোর্টে প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কেউ এখনো খোঁজ নেয়নি।

সর্বশেষ খবর