শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
যুক্তরাষ্ট্রে সেমিনারে বিশিষ্টজনেরা

কঠিন চ্যালেঞ্জ থেকে চমকপ্রদ উন্নয়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

কঠিন চ্যালেঞ্জ থেকে চমকপ্রদ উন্নয়ন

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সেমিনারে অতিথিরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিশ্বখ্যাত কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সেমিনারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথপরিক্রমার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বক্তারা। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অসাধারণ রূপান্তরের গল্পটি আসলেই চমকপ্রদ। শুরুটা ছিল দারুণ চ্যালেঞ্জিং। মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশ ছিল এক ধ্বংসস্তূপ। বলা চলে শূন্য হাতেই বাংলাদেশ তার উন্নয়ন অভিযাত্রা শুরু করেছিল। সেখান থেকেই এক অসাধারণ উন্নয়নের পথে হেঁটে এসেছে বাংলাদেশ। ‘বাংলাদেশ ইকোনমি অপরচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক এই সেমিনার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকালে শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত চলে। বিশ্বের স্বনামখ্যাত শিক্ষাবিদ ও স্কলাররা এতে অংশ নেন। বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের সভাপত্বিতে এ সেমিনারে মূূল বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. বিরূপাক্ষ পাল। আলোচক প্যানেলে ছিলেন জাতিসংঘের ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ টিমের সাবেক প্রধান ড. নজরুল ইসলাম, কলোরাডো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ফরিদা খান, পরিবেশ ও পানিবিজ্ঞানী ড. সুফিয়ান এ খন্দকার, মনমাউথ ইউনিভার্সিটির ডক্টর অব সোশ্যাল প্রোগ্রামের ডিরেক্টর অধ্যাপক গোলাম এম মাতবর, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মাইকেল স্টেকলার। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল বি খান, মেলবোর্ন শহরের মেয়র মাহবুবুল আলম তৈয়ব ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের বড় সম্পদ ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্দীপনামূলক নান্দনিক নেতৃত্ব। জাতিকে দেওয়া এই নেতৃত্বের লড়াকু মনই বাংলাদেশকে টেনে তুলে দেয় উন্নয়নের মহাসড়কে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বড় কোনো ভুল-কৌশল বাংলাদেশ গ্রহণ করেনি। নিউ হ্যাম্পশায়ারের মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য আবুল বি খান বলেন, ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন আইনপ্রণেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমার যোগাযোগ অব্যাহত আছে এবং আমি অনেকবার বাংলাদেশ সফর করেছি। ৪৩ বছর আগে দেশ ছেড়ে আসার পর থেকে বাংলাদেশ এখন যে পর্যায়ে উঠে এসেছে সেটি সত্যিই অসাধারণ। এটি ছিল একটি দীর্ঘ পথ। যেটি রাতারাতি ঘটেনি। খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, ক্ষুদ্রশিল্পের উন্নয়ন, উদ্যোক্তা বৃদ্ধি এবং নতুন ধারণার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বড় অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে অবকাঠামোগত বিশাল উন্নয়ন হয়েছে, যা কৃষি ও খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। কিছু বড় প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে প্রায় শেষ বা সমাপ্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এ সেমিনার ও সংলাপ আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ কীভাবে এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে এসে পৌঁছেছে তা বোঝাতে আমাদের সম্প্রদায় ও নীতিনির্ধারকরা খুবই সহায়ক ভূমিকা রাখবেন। বাংলাদেশ আর তথাকথিত সেই ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নয়। আমরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এ তকমা ঝেড়ে ফেলেছি। অনুষ্ঠানে কলোরাডো ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের বাংলাদেশি অধ্যাপক ফরিদা খান বলেন, অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতে চাই যে, প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা প্রতি বছর ৬ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে পাঠান। আগামীর বিশ্বে যে পরিমাণ শ্রমিক প্রয়োজন সে ঘাটতি মেটাতে আমাদের তৈরি হতে হবে। আমাদের শিক্ষাগত দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বাংলাদেশের চলমান মেগা প্রকল্প নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র উপস্থাপন করেন পরিবেশ ও পানি বিজ্ঞানি ড. সুফিয়ান এ খন্দকার। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মাইকেল স্টেকলার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। মৌসুমি বায়ু দিনে দিনে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। কিছুদিন আগে আমার করা একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, এই মৌসুমি বায়ুর ফলে বেশি পলি জমা হবে। তবে খারাপ সংবাদ এটি যে, ভারত এবং চীন নদীগুলোতে বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণ করছে। যা পরিবেশের বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে। মনমাউথ ইউনিভার্সিটির ডক্টর অব স্যোশাল প্রোগ্রামের ডিরেক্টর অধ্যাপক গোলাম এম মাতবর বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের রোল মডেল- এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স। জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে তৈরি পোশাক রপ্তানি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জ্বালানি ও সারে ভর্তুকি দিয়েছে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান রাজনীতিবিদ শেখ রহমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক দূর এগিয়েছে। আমাদের সম্ভাবনার শেষ নেই। সবচেয়ে বড় সম্পদ তরুণ যুব সমাজ। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাই না কেন বাংলাদেশিদের দেখা পাওয়া যায়। তবে দুর্নীতি, আমলাতন্ত্রের মতো কিছু সংকট রয়ে গেছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রেখে সামনের নির্বাচনে যোগ্য ব্যক্তিদের ভোট দিয়ে দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। মেলবোর্ন শহরের মেয়র মাহবুবুল আলম তৈয়ব বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে সময়োপযোগী এই আলোচনায় অভিজ্ঞতা বিনিময়ের অংশ হতে পেরে ভালো লাগছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির দৃঢ় গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলার পেছনে প্রবাসীদের মেধা ও রেমিট্যান্সের অবদান রয়েছে। যারা দেশে রয়েছেন তারাও এই রেমিট্যান্সের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান। সেমিনার শেষে বক্তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম।

সর্বশেষ খবর