শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক

সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন বিএনপির দাবি মেনেও সম্ভব

আকতারুজ্জামান

সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন বিএনপির দাবি মেনেও সম্ভব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, একটি দেশের সংবিধানই চূড়ান্ত, যা সমুন্নত রেখে নির্বাচন করা, পরবর্তী সরকার গঠন করা- সবকিছু হতে হবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, এটি সরকারের পক্ষ থেকেও বারবার বলা হচ্ছে। আমাদের সংবিধান একটি আধুনিক মানের সংবিধান। এই সংবিধানে যতটুকু নমনীয়তা আছে তা দেখিয়েই সুন্দরভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা যায়। আমি মনে করি, বিএনপি বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি-দাওয়া মেনেও সাংবিধানিকভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, আমি মনে করি, নির্বাচনকালীন রুটিন দায়িত্ব পালনকালে দেশে যে একটি ছোট মন্ত্রিসভা থাকবে, সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ বা প্রতিনিধিত্ব থাকতে পারে। এটি কিন্তু সংবিধান মেনেই করা সম্ভব। গত ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে এমন আভাসই দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের চেয়েও বড় বড় সংকট পৃথিবীতে আসে। আর এসব সংকটের সমাধানও হয়। আমার মনে হয় নানারকম অপশন আছে সংকট সমাধানের জন্য।

তিনি বলেন, সব সংকট সমাধানের বড় উপায় হচ্ছে জনমত। জনমত হচ্ছে মানুষের ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা পরিমাপের পারদ। জনগণই আমাদের দেশের নিয়ন্ত্রক। আমি মনে করি সব দলের সিদ্ধান্ত স্ব-স্ব দলের সমর্থকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়ে থাকে। এ দেশের জনগণ বহু রাজনৈতিক দলে বিভাজিত, বহু রাজনৈতিক মতামতে তারা বিশ্বাস করে। কিন্তু আমি মনে করি দেশের সতেরো কোটি মানুষই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চান। নির্বাচন ছাড়া যে অন্য কিছু হতে পারে না সেটিও দেশের জনগণ বিশ্বাস করে।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নির্বাচন যত কাছাকাছি আসবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা, প্রত্যাশা তত বাড়তে থাকবে। নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকও থাকবে। তাই এই নির্বাচনে কোনো অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা হলে তা শুধু বাংলাদেশই নয়, পুরো বিশ্ববাসীর নজরে আসবে। আমি মনে করি, এসব বিষয় আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন সতর্কতাবস্থা অবলম্বন করছে। আশা করছি, আগামী নির্বাচন বস্তুনিষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ হবে।

এ শিক্ষাবিদ বলেন, নানা কারণে আমরা একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক হোক- এটি প্রত্যাশা করছি, যেটি সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের কথায় এটি বোঝা যায় যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোনো সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। কিন্তু নির্বাচন তো সরকারের অধীনে হয় না, নির্বাচন হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচনকালীন একটি সরকার থাকে যেটি শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করে। সরকারের অধীনে নির্বাচন কথাটি বিভ্রান্তিমূলক। এই বিভ্রান্তি আমাদের দূর করতে হবে।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নির্বাচনের আর কয়েক মাস বাকি। আশা করছি, আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের জন্য যে সময়টুকু আছে সেই সময়ে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল জনগণের কাছে যাবে এবং তার দলের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু মূল বার্তাটি আসবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে। নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতির কথা উঠে আসবে।

তিনি বলেন, সরকারের নেতৃত্বে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনে দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে কি না তা নির্ভর করবে দেশের জনগণের ওপর। আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে লেখা আছে জনগণই প্রজাতন্ত্রের মালিক। আমি মনে করি, দেশের মানুষ যে রাজনৈতিক দলের অনুসারীই হন না কেন, তারা চান প্রত্যেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিক। তারা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের দিকে যাবে বলেই মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর