শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঘন ঘন উচ্চারিত দুই নাম সিলেটের রাজনীতিতে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ঘন ঘন উচ্চারিত দুই নাম সিলেটের রাজনীতিতে

সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন ঘন ঘন যে দুজনের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তারা হলেন- শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। সিলেটি রাজনীতিতে একদা তারা ছিলেন দাপুটে। শমসের ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, আর সুলতান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। কেন্দ্রে ব্যাপক প্রভাব থাকায় স্থানীয় রাজনীতিতেও তাদের ছিল আধিপত্য। সিলেট বিএনপির বড় একটি অংশের নেতৃত্ব দিতেন শমসের মবিন। আর সুলতান ছিলেন নিজ দলের তরুণ নেতা-কর্মীদের ‘আইকন’। কিন্তু আচমকা ‘ঝড়ে’ রাজনীতিতে অনেকটা ম্লান হয়ে পড়েছিলেন এ দুই নেতা। তবে সময়ের ব্যবধানে ফের স্বমহিমায় ফিরতে যাচ্ছেন উভয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ দুই নেতাকে নিয়ে সিলেটে শুরু হয়েছে নতুন হিসাবনিকাশ। জল্পনা চলছে- নির্বাচনের আগেই দুই নেতার রাজসিক প্রত্যাবর্তন ঘটতে যাচ্ছে।

চাকরিজীবন শেষ করে ২০০৮ সালে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জের কৃতীসন্তান শমসের মবিন চৌধুরী। ২০০৯ সালে তিনি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সাইফুর রহমানের মৃত্যু ও ইলিয়াস আলীর ‘নিখোঁজ’ ঘটনায় নেতৃত্বশূন্য সিলেট বিএনপিতে অনেকটা একক আধিপত্য গড়ে তুলেছিলেন শমসের। তাকে ঘিরেই তখন পরিচালিত হচ্ছিল সিলেট বিএনপির বৃহৎ অংশ। হঠাৎ করে ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি বিএনপি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দিলেও রাজনীতিতে আর সক্রিয় হননি। দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে তিনি সম্প্রতি যুক্ত হয়েছেন প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার দল ‘তৃণমূল বিএনপি’তে। গত মঙ্গলবার দলটির কাউন্সিলে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। জানা গেছে, শমসের মবিন চৌধুরী তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের কয়েকদিন আগে থেকে সিলেটের অনেক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে তার এই যোগাযোগ কুশল বিনিময়েই সীমাবদ্ধ ছিল। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তৃণমূল বিএনপির ব্যানারেই শমসের মবিন চৌধুরী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ কিংবা সিলেট-৬ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন। নির্বাচনের আগে শমসের মবিনের হাত ধরে সিলেটে কোনো নেতা তৃণমূল বিএনপিতে নাম লেখাচ্ছেন কি-না সেটা নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। সিলেটের একটি আসনে বিএনপির এক সাবেক এমপি তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করছেন এমন গুঞ্জনও চলছে সিলেটে।

এদিকে সম্প্রতি সিলেটের রাজনীতির পালে নতুন ঢেউ তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুলতান মনসুর একসময় ছিলেন সিলেটের তরুণ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ‘আইকন’। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যাকাণ্ডের পর যে কয়জন নেতা এর প্রতিবাদ করেছিরেন তাদের অন্যতম সুলতান। রাজনৈতিক উত্থান পর্যায়ে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে উন্নীত হন। নিজ এলাকায় মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের ‘কালোঝড়’ তছনছ করে দেয় সুলতান মনসুরের রাজনৈতিক আসন। ছিটকে পড়েন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’র ব্যানারে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও নির্বাচনী জনসভায় তিনি জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে শেষ করতেন তার বক্তৃতা। ধানের শীষের প্রার্থীর মুখে জয় বাংলা স্লোগান শুনে অনেকেই তখন বলতেন, ‘সুলতান প্রতীক পরিবর্তন করলেও আদর্শ বদলাননি’।

সেই সুলতান মনসুর আবারও এসেছেন সিলেটের রাজনীতির আলোকচ্ছটায়। গেল মাসে যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকাগামী ফ্লাইটে জাতির পিতার কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল ছবিতে অনেকেই ইঙ্গিত খুঁজছিলেন সুলতানের রাজসিক প্রত্যাবর্তনের। আর গত ১ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের সমাবেশে শেখ হাসিনার মঞ্চে সুলতান মনসুরকে দেখে সেই সম্ভাবনা আরও জোরদার হয়েছে তার শুভাকাক্সক্ষী ও রাজনৈতিক সচেতন মহলে।

সিলেটের রাজনীতিকদের অনেকেই মনে করেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সুলতান ফিরছেন রাজসিকভাবে। আর নির্বাচন করবেন নৌকা প্রতীক নিয়েই।

আগামী নির্বাচন ও রাজনীতি প্রসঙ্গে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, ‘৫৪-৫৫ বছর ধরে রাজনীতি করছি। আমি জাতির জনকের আদর্শে বিশ্বাসী। আমার রাজনীতির পুরোটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়েই প্রার্থী হতে চাই। দল যেখানে আমাকে যে কাজে লাগাতে চাইবে আমি সে জন্য প্রস্তুত। তবে নৌকা প্রতীক ছাড়া নির্বাচন করব না এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’

সর্বশেষ খবর