শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঢাকায় জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি

নিরসনে বছরে ব্যয় ৩০০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি

বৃহস্পতিবার টানা বর্ষণের পর গতকালও রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা ডুবে ছিল কোমরপানিতে -জয়ীতা রায়

২৪ ঘণ্টা পার হলেও রাজধানীর নিউমার্কেট, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা কলেজসহ দুই সিটি করপোরেশনের অনেক এলাকা থেকে পানি সরেনি। মূল সড়ক, অলিগলি ও বাসাবাড়িতে পানি জমে ছিল। অনেক দোকানপাট বন্ধ ও বাসাবাড়িতে আটকে আছেন বাসিন্দারা। জলাবদ্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও পথচারীরা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক স্থানের জলাবদ্ধতা কাটেনি। অথচ দুই সিটি করপোরেশন প্রতি বছর খাল ও ড্রেন পরিষ্কারের কাজে ৩০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করছে। তবু জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পায়নি নগরবাসী। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মাত্র ৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরে ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এতে তলিয়ে যায় পুরো শহরের বেশির ভাগ রাস্তা। ভয়াল যানজটে রূপ নেয় ঢাকা। রাতে যাতায়াত করা শহরবাসীকে এক আতঙ্কের মধ্য দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। অনেকে অফিস শেষ করে ৮-১০ ঘণ্টা পর বাসায় পৌঁছেছেন। ফার্মগেট গ্রিন রোডের কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি জমে যায়। একই সঙ্গে নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, জিগাতলা, মিরপুর, পুরান ঢাকাসহ পুরো রাজধানী জলাবদ্ধ ছিল।

জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটির ব্যয় : দুই সিটির আওতায় ২ হাজার ২১১ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। দক্ষিণে ৯৬১ ও উত্তরে ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার। সিটি করপোরেশনে হস্তান্তরের আগে তারা শুধু উন্মুক্ত (সারফেস) ড্রেন পরিষ্কার ও নির্মাণ করত। হস্তান্তরের আগের পাঁচ বছরে ড্রেনের পেছনে ডিএসসিসি ব্যয় করে ৬০৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। একই সময়ে ডিএনসিসি ব্যয় করে ৭১১ কোটি টাকা। ওই সময় প্রতি বছর ঢাকা ওয়াসা খাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যয় করেছে গড়ে ৫০ কোটি টাকা। হস্তান্তরের পর ড্রেন ও খাল দুটির জন্যই অর্থ ব্যয় করছে সিটি করপোরেশন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই সিটি করপোরেশনের একাধিক প্রকৌশলী জানান, খাল ও ড্রেনের পেছনে দুই সিটি করপোরেশন প্রতি বছর গড়ে ৩০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করছে। খাল দখলমুক্ত করা, খাল-ড্রেন, বক্স কালভার্টের মধ্যে জমে থাকা বর্জ্য অপসারণের জন্য এ অর্থ ব্যয় করা হয়। কিন্তু পরিষ্কার করার কিছুদিন পরই একই অবস্থা হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধানমন্ডির জিগাতলার সড়ক থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি সরেনি। সড়কে ছিল হাঁটুপানি। অনেক পথচারী বাধ্য হয়ে রিকশা দিয়ে চলাচল করেছেন। একই অবস্থা ছিল আজিমপুরে। বিভিন্ন গলি, দোকানপাট ও বাসাবাড়ির নিচতলায়ও বাসিন্দারা পানি সরানোর কাজ করছেন। তবে আশপাশের ড্রেনগুলোয় পানি জমে যাওয়ায় পানি সরানোর চেষ্টাও কাজে আসছে না। নিউমার্কেটের ভিতর-বাইরে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল হাঁটুপানি। মিরপুর সড়কেও ছিল পানি। ফুটপাত ও আশপাশের দোকানেও ছিল পানি। আর নিচু দোকানগুলোর প্রায় অর্ধেকাংশ পানির নিচে। নষ্ট হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মালামালও। মেরুল বাড্ডার পোস্ট অফিস গলি ও ডিআইটি প্রজেক্টের অনেক সড়কে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি ছিল। স্থানীয়রা হেঁটে চলাচল করতে না পারায় বাধ্য হয়ে রিকশায় যাতায়াত করছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। এ ছাড়া বংশাল রোড, পুরান ঢাকার জুরাইন, সিক্কাটুলী, মিরপুর-১২, মিরপুর-২, দক্ষিণখান, আশকোনাসহ বেশকিছু এলাকা পানির নিচে ছিল। এসব এলাকার অধিকাংশ বাড়িঘর ও দোকানপাট পানিবন্দি ছিল। নিউমার্কেটের বাইরের ফুটপাতে ব্যাগের দোকানে কাজ করেন খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, শুক্রবার নিউমার্কেট এলাকা ব্যবসার দিন। কিন্তু গত রাতের (বৃহস্পতিবার) বৃষ্টিতে নিউমার্কেটের আশপাশ এলাকা এখনো জলাবদ্ধ হয়ে আছে। দোকান খোলা দূরের কথা, হাঁটাচলাই করা যাচ্ছে না। পথচারীসহ অন্যদের পানি মাড়িয়ে চলতে হচ্ছে।

আজিমপুরে কথা হয় সিএনজিচালক মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী থেকে আজিমপুরে একটা ট্রিপ নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি ওই দিকের রাস্তায় এখনো পানি জমে আছে। সিএনজি নিয়ে গেলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে। তাই যাত্রী নামিয়ে রিকশা ঠিক করে দিয়েছি।’

আরও কয়েকদিন ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা : রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে বিহার এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।

মৌসুমি বায়ু উত্তরাংশে সক্রিয় এবং বাংলাদেশের অন্যত্র মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। তাপমাত্রা বিষয়ে বলা হয়েছে সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আবহাওয়া অফিসের অপর এক বিজ্ঞপ্তি জানা গেছে, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারা দেশে তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর