শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
নির্বাচনী ভাবনা

মানুষের ভোট দিতে পারার নিশ্চয়তা প্রয়োজন

আলী ইমাম মজুমদার

ওয়াজেদ হীরা

মানুষের ভোট দিতে পারার নিশ্চয়তা প্রয়োজন

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, জনগণ যেন ভোট দিতে পারে এবং ভোটে উপযুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়- এমন নির্বাচন হতে হবে। নইলে নির্বাচন নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। নির্বাচনে সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে মানুষ ভোট দিতে পারবে- এমন নিশ্চয়তা চেয়েছেন তিনি। আগামী জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে এক সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ কথা বলেন প্রশাসনের এই সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা।

কেমন নির্বাচন আশা করেন জানতে চাইলে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এ দেশের মানুষ যে উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে, স্বাধীনতার চেতনা বলতে যা বোঝায়, তার প্রধান ছয় দফা কর্মসূচির প্রথম দফায় ছিল সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে পার্লামেন্টে গঠিত সরকার। সংবিধান প্রণেতারা সর্বজনীন ভোটাধিকারের বিষয়টি সংবিধানে সংযোজন করেছেন, এটা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করেছে। গত কয়েক টার্ম ধরে আমরা এটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে মানুষ ভোট দিতে পারবে- এই নিশ্চয়তা চাই। তিনি বলেন, মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য পাবে না, স্থিতিশীল সরকার গঠনের জন্যও জনগণের অংশগ্রহণ দরকার। সরকারও কিন্তু জনগণের অংশগ্রহণের কথা বলছে। দেশে তিন ধরনের ভোটার আছে উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগের কোর ভোটার, বিএনপির কোর ভোটার আরেক ধরনের হলো ভাসমান ভোটার। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগে কোর ভোটার কিন্তু প্রায় সমান সমান। সেখানে ভাসমান ভোটাররা যেদিকে ঝোঁকে সেই দল জয়ী হয়। কোনো একটি প্রধান দল আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে তাদের ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসবে কিনা সংশয় আছে। এতে বিরাট সংখ্যক লোক নির্বাচনের বাইরে থাকবে। পাশাপাশি আমাদের মতো নিরপেক্ষ ভোটার যারা আছেন, যখন দেখবে উপযুক্ত প্রতিযোগিতা নেই, তখন কিন্তু তারাও নির্বাচনে আগ্রহী হবে না। ওরকম যেন না হয় সে জন্য সবার সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সাবেক এই আমলা বলেন, বিরোধী দল স্বাভাবিকভাবে একটা জিনিস চাইতে পারে সেটা সমতল ক্ষেত্র। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাওয়াটা সংগত। আমরা দেখেছি ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সমতল ক্ষেত্র ছিল না। ২০১৮ সালে সব বিরোধী দল অংশ নিয়েছিল; ২০১৪ সালে অংশ নেয়নি। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনকালীন এবং পরে যে সুযোগ সুবিধা দরকার হয় বিরোধী দলগুলোর যেমন কর্মী-সমর্থকদের নিরাপত্তা এবং তাদের প্রচার প্রচারণার সুযোগ, সুষ্ঠুভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ এসব অনুপস্থিত ছিল ২০১৮-এর নির্বাচনে। এ ধরনের অবস্থা এবার যেন না হয়।

সরকার পদ্ধতি কেমন হবে সেটা রাজনৈতিকভাবে মীমাংসা করা উচিত- মন্তব্য করে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্বাচনের তিন চার মাস আছে। এখনই দেখা যাচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাছাই করে করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এসব দেখে হতাশ হচ্ছি। ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময়ে সরকারকে ক্ষমতায় রেখেই বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে গেল একটা জোট করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে। ওই সময় যদি নির্বাচনটা যথাযথভাবে হতে দেওয়া হতো তাহলে আজকের এই বিতর্ক ও পরিবেশটা তৈরি হতো না। তিনি বলেন, আজকের এই দিনটার জন্য ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন দায়ী। ২০১৪ সালে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হলো। সেখানে মানুষের অংশগ্রহণ নেই অথচ এমপি নির্বাচন হয়ে গেল। ভবিষ্যতে কী হবে এখনই বলতে পারছি না, তবে জনসমর্থন দরকার। রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, সংবিধান বা আইন সব সময় জনগণের জন্য। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি এরশাদ যখন গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি, বিএনপির নেতৃতে একটি এবং বামজোটের নেতৃত্বে একটি মোট তিনটি জোট ছিল। তিন জোটের রূপরেখা অনুসারে তখন প্রধান বিচারপতির কাছে রাষ্ট্রপতি এরশাদ ক্ষমতা ও দায়িত্ব অর্পণ করলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মো. সাহাবুদ্দিন আহমদ দায়িত্ব গ্রহণ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠান করেন। সেটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা গ্রহণের কোনো বিধান ছিল না। তাই, ওই নির্বাচনের পরে সংবিধানে একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনী এনে প্রধান বিচারপতির রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা গ্রহণ বৈধতা দেওয়া হয়। আসন্ন নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকা আইনানুগ হওয়া উচিত উল্লেখ করে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, মাঠ প্রশাসনে বড় ধরনের বাছাই করা দরকার রয়েছে। নিরপেক্ষ সরকার এলে বাছাই করা হয়। এর আগে যত নির্বাচন হয়েছে ৯১, ৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বাছাই করা হয়েছে। তিনি বলেন, ওই সময়ে যারা দলের কট্টর সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন, তাদের মাঠপ্রশাসন থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। দেশের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম তা আগের ওইসব নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এখন চাইলে নির্বাচন কমিশনও এই বাছাই করতে পারে। জামালপুরের ডিসিকে বদলির বিষয়ে ইসি হস্তক্ষেপ করেছে এবং তা সঠিকই করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর