শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উজরা জেয়ার সাক্ষাৎ

ফের সুষ্ঠু নির্বাচনে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

সাখাওয়াত কাওসার, নিউইয়র্ক থেকে

আবারও বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি উজরা জেয়া তাঁর দেশের এই মনোভাবের কথা জানান। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে এ সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাতের বিষয়ে বার্তা দিয়েছেন উজরা জেয়া নিজেই, বিবৃতি দিয়েছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এবং কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বৈঠকে তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের উন্নয়নের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বন্ধু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জনগণের প্রতি শেখ হাসিনার আহ্বানকে সমর্থন করে। উজরা জেয়া নিজেই এক্সে (সাবেক টুইটার) সচিত্র একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের একটি সাইড ইভেন্টের আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আবারও যুক্ত হতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, অংশীদারির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি এবং ৯ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে উদারতার সঙ্গে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছি।’ এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর উজরা জেয়া পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সুষ্ঠু নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন। একই মনোভাবের কথা তিনি ১১ জুলাই ঢাকা সফরেও জানিয়েছিলেন।

সাক্ষাতের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের বলেছেন, শেখ হাসিনা ও উজরা জেয়ার বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের বিষয়টি উঠে আসে। উজরা জেয়া বলেন, তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অহিংস নির্বাচন চান। শেখ হাসিনা বলেছেন আমরাও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে না। মোমেন বলেন, ‘দেশের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন হবে। সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোট ছাড়া কেউ ক্ষমতায় আসতে পারে না। ভোট কারচুপির মাধ্যমে কেউ ক্ষমতায় এলে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আগামী সাধারণ নির্বাচনে আমরা বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাই। তবে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশির ভাগ দেশই নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দেয় না। বিদেশিরা কিছু ভালোভাবে বর্ণনা করলে ভালো হবে, অন্যথায় ভুল হবে। আমরা বিদেশিদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে দেশ চালাতে চাই না।’

ড. মোমেন বলেছেন, সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও উজরা জেয়া বিভিন্ন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যা নিয়েও আলোচনা করেন। উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান তাঁরা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে ১১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করতে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেন। যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করার আগে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত, অন্যথায় এ অঞ্চল নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হওয়ায় রোহিঙ্গারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে কারণ তারা সেখানে কোনো ভবিষ্যৎ অনুভব করছে না। অনেক রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে হত্যা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান এবং মাদক ব্যবসার মতো বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় আন্তর্জাতিক সমর্থনও চেয়েছেন। এরই মধ্যে ফ্রান্স, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক ও মালদ্বীপ মামলার প্রতি সম্মতি দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর