শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনায় শিশু হোসাইন বেঁচে গেল অলৌকিকভাবে

অন্যদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল অটোচালকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘রাখে আল্লাহ মারে কে’... কথাটার আবারও সত্যতা মিলল সাত মাস বয়সী হোসাইনের ক্ষেত্রে। গত বৃহস্পতিবার রাতের বৃষ্টির পর শোকের ছায়া নেমে আসে মিরপুরের কমার্স কলেজ সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তিতে। সেদিন বস্তির সামনের রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ যায় একই পরিবারের তিন সদস্যের। পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য শিশু হোসাইন তার মায়ের কোল থেকে পানিতে পড়ে গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়। এই শিশু ও তার বোনকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান ঘটনাস্থলে উপস্থিত তরুণ অটোরিকশাচালক অনিক। শুক্রবার রাতের এই নির্মম দুর্ঘটনাটির ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বেদনাদায়ক এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের অনেকেই দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি সড়কে জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাস্তায় জমে থাকা পানির মধ্যেই শ্বশুরবাড়ি থেকে বাসায় ফিরছিলেন মিজান (৩০) ও তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৫)। তাদের সঙ্গে ছিল মেয়ে লিমা (৭) ও ছেলে সাত মাস বয়সী হোসাইন। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তারা সড়কে জমে থাকা পানিতে পড়ে গেলে তাদের তুলতে এগিয়ে আসেন অনিক নামে এক অটোচালক। হোসাইনকে পানি থেকে তুলে দিতে পারলেও লিমাকে ওঠাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অনিকেরও মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা বলেন, অনেকটা অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় শিশু হোসাইন। তারা জানান, মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে যাওয়ায় প্রাণে রক্ষা পায় শিশুটি। শিশুটির উদ্ধারকাজে সম্পৃক্ত ছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের আমেনা ও বৃষ্টি। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আমেনা বলেন, ‘হোসাইনের মা যখন পানিতে পড়েন তখন তার মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে। এ সময় অনিক সঙ্গে সঙ্গে এসে হোসাইনকে পানি থেকে তুলে আমার কোলে দেয়।’ পরে আমেনা শিশুটিকে বাসায় নিয়ে প্রথমে শরীরে গরম তেল মাখিয়ে দেয়। পরে শিশুটির নাক দিয়ে রক্ত বের হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। পরিচিত কেউ না থাকায় বৃষ্টি ও আমেনা হোসাইনকে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসা শেষে পরদিন সকালে চিকিৎসক শিশুটি সুস্থ আছে জানিয়ে বাসায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। শিশু হোসাইনকে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া। পরে শিশুটিকে তার দাদা ও নানার কাছে নিয়ে যান আমেনা ও বৃষ্টি। জানা যায়, এ দুর্ঘটনায় হোসাইনের হাত ও পিঠে আঘাত লেগেছিল। সে এখন তার নানির কাছে রয়েছে। আমেনা আরও বলেন, ‘হোসাইনকে অনিকের মাধ্যমে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। নইলে একই ঘটনায় তার মা-বাবা এবং বোন ও অনিক মারা গেছেন। শিশুটিরও বাঁচার কথা ছিল না।’

জীবন দিয়ে হোসানইকে বাঁচালেন অনিক : পেশায় অটোরিকশাচালক অনিক শুক্রবার রাতে বৃষ্টি শুরু হলে মিরপুর কমার্স কলেজ সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশের একটি দোকানের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। বৃষ্টিতে পানি জমে গেলে তা ঠেলেই পথচারীরা গন্তব্যে ফিরছিলেন। হঠাৎ পানিতে চারজন পড়ে যান। তাদের উদ্ধারে এগিয়ে যান অনিক। তখনো এই যুবক বুঝতে পারেনি যে যারা পানিতে পড়ে গেছে তারা বিদ্যুতায়িত হয়েছে। শুক্রবারের ঘটনায় হোসাইনকে পানি থেকে তুলে তার প্রাণ বাঁচায় অনিক। পরে হোসাইনের বোন লিমাকে পানি থেকে তুলতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে অনিকও মারা যান। অনিকের মামা আলম মিয়া বলেন, এক বছর আগে অনিক বিয়ে করে। তবে গত বুধবার বিকালেই অনিকের সঙ্গে তার স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়। অনিক ঝিলপাড় বস্তির গ্যারেজেই থাকতেন।’

গ্রাহকের ওয়্যারিং ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা : রাজধানীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চারজনের মৃত্যুতে বিদ্যুৎ বিভাগ দুঃখ প্রকাশ করেছে। তাদের ধারণা, গ্রাহকের ইন্টারনাল সার্ভিসের ওয়্যারিং ত্রুটির কারণে এই বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনাটি তদন্ত করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় মিরপুরের রূপনগরে চারজনের মৃত্যু হয়। এতে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গতকাল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দুঃখ প্রকাশের কথা জানানো হয়। জানা গেছে, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) কর্তৃপক্ষ ঘটনার রাত সাড়ে ১০টায় ফায়ার সার্ভিস থেকে মিরপুরের হাজী রোড এলাকায় দুর্ঘটনার খবর পায়। সঙ্গে সঙ্গে রূপনগর বি ও বি (ডেসকো) বিভাগের আওতাধীন রূপালি হাউজিং ও রূপনগর ফিডার বন্ধ করে দেওয়া হয়। বৃষ্টির মধ্যে ডেসকো পরিদর্শন টিম এলাকাটি ঘুরে কোনো এলটি/এইচটি লাইন ছেঁড়া বা ছেঁড়া বিদ্যুতের তার পায়নি। পরে রাত ১১টা ২৭ মিনিটে বন্ধ ফিডার লাইন চালু করা হয়। সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া এবং বস্তিপ্রবণ হওয়ায় আশপাশের এলাকার ছয়টি ট্রান্সফরমার বন্ধ রেখে রাত ১১টা ২৭ মিনিটে রূপালি হাউজিং ও রূপনগর ফিডার চালু করা হয়। পরে প্রতিটি ট্রান্সফরমারের লাইন পরীক্ষা করে কোনো সমস্যা পাওয়া না যাওয়ায় রাত ১২টা ৩০ মিনিটের মধ্যে সব ট্রান্সফরমার চালু করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর