শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভারত-কানাডা বিরোধ নতুন মাত্রায় গড়াচ্ছে

প্রতিদিন ডেস্ক

ভারত-কানাডা বিরোধ আরও নতুন মাত্রায় গড়াচ্ছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আবারও বলেছেন, ‘ভারত সরকারের এজেন্টরাই কানাডার মাটিতে একজন কানাডিয়ান নাগরিক হত্যার সঙ্গে জড়িত। এর বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে।’ পাশাপাশি হোয়াইট হাউস এ পর্যন্ত সতর্ক (নিরপেক্ষ) অবস্থানে থাকার কথা উল্লেখ করলেও এখন কানাডার সমর্থনে বলেছে, ‘ওই হত্যার ঘটনায় কাউকে বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে না।’ এতে বিরোধ এবং পক্ষাবলম্বনের ঘটনাটি দুই দেশ ছাড়িয়ে বিস্তৃত হওয়ার দিকে যাচ্ছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এনডিটিভি।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কানাডায় খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার বিষয়ে বলেছেন, ‘এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। আমরা এই বিষয়গুলো খুব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি। এ ধরনের কাজের কাউকে কোনো বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে না।’ খবরে বলা হয়, এর মধ্যদিয়ে ভারত ও কানাডার মধ্যে চলমান কূটনৈতিক বিরোধ আরও গভীর হচ্ছে। এখন আমেরিকাও পরোক্ষভাবে কানাডাকে সমর্থন করছে। ভারত ও কানাডার মধ্যে চলমান বিরোধ মার্কিন-কানাডার সম্পর্কে ফাটল ধরেছে- এমন অভিযোগকে আমেরিকা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করছি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যে কোন মত পার্থক্য রয়েছে। আমরা অভিযোগগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং এই তদন্তকে এগিয়ে নেওয়া এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা একান্তভাবেই দরকার।’ জ্যাক সুলিভানকে কানাডায় হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যায় ভারতীয় এজেন্টদের জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমেরিকা শীর্ষ স্তর থেকে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং ওয়াশিংটন এই বিষয়ে ভারতকে কোনো বিশেষ ছাড় দিচ্ছে না। আমেরিকা তার নীতির পক্ষে দাঁড়াবে, তাতে যে দেশই আক্রান্ত হোক না কেন।’ এদিকে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে আবারও ভারতের বিরুদ্ধে নিজ অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের কানাডার মিশনের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, হরদীপ সিংকে হত্যায় ভারতীয় এজেন্টদের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। আমি আগে যেমনটা বলেছি, আজও তেমনটাই বলতে চাই। একটি দেশের আইনের শাসনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়মশৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আমরা তার পক্ষেই দাঁড়িয়েছি। কানাডা আইনবিভাগ যথেষ্ট কঠোর ও স্বাধীন। ট্রুডো বলেন, ‘এ কারণে আমরা ওই ঘটনার সত্য উদ্?ঘাটনে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে তাদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।’ ট্রুডো বলেন, ‘আমার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরাসরি ও খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। তাকে আমি আমার উদ্বেগের কথা বলেছি।’

টরন্টো স্টারের প্রতিবেদন : অটোয়া ও নয়াদিল্লিতে কূটনীতিক বহিষ্কার, বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত, ভারতের কানাডায় ভ্রমণ সতর্কতা জারি এবং কানাডার নাগরিকদের ভারতীয় ভিসা দেওয়া সাময়িক স্থগিতের পর দেশ দুটি এবার কী পদক্ষেপ নিতে পারে- সে বিষয়ে গতকাল কানাডার সংবাদমাধ্যম টরন্টো স্টার- এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রভাব শেষ পর্যন্ত দুই দেশের জনগণের ওপর পড়তে পারে। ইন্দো-কানাডা সম্পর্কের এই বিরোধকে ‘আশ্চর্যজনক’ উল্লেখ করে সাবেক কানাডীয় কূটনীতিক প্যাট্রিসিয়া ফর্টিয়ের বলেছেন, ‘বিদেশি কর্মকর্তাকে কোনো দেশ থেকে বহিষ্কারকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এমন পদক্ষেপ কেবল তখন নেওয়া হয়, যখন কর্তৃপক্ষ একান্ত আলোচনায় কোনো ইস্যু সমাধানে ব্যর্থ হন।’ ওয়াশিংটনে কানাডা দূতাবাসে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ফর্টিয়ের বলেছেন, ‘কূটনীতিক বিশ্বে এটি খুব কঠোর পদক্ষেপ। এটি দেশ অপর দেশকে অসন্তুষ্টির তীব্রতা জানান দেয় এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে। বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা একটি বড় পদক্ষেপ। কোনো ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ বড় পদক্ষেপ। এসব পদক্ষেপ শত্রুতাপূর্ণ।’ ইউনিভার্সিটি অব অটোয়ার গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের প্রধান রোনাল্ড প্যারিস বলছেন, ‘এটি হয়তো ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের শীতলতার শুরু মাত্র, এই উত্তেজনার অবসান- নাকি আরও খারাপ হবে, তা অস্পষ্ট। কারণ, এখনো নিজ্জর হত্যার তদন্ত চলমান। দুই দেশের কূটনৈতিক উত্তেজনার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি আমরা। বিরোধের অবসান কঠিন হবে। কারণ, ভারত সরকার প্রকাশ্যে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।’ হংকং ও ম্যাকাউয়ে কানাডার কনসাল জেনারেল হিসেবে কাজ করা নাঙ্কিভেল বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতিসংঘ বা জি-২০- তে কোনো পদক্ষেপের পক্ষে সমর্থন বা দর কষাকষির ক্ষেত্রে কানাডা হয়তো ব্যর্থ হবে, ভারত তাদের বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে।’

সর্বশেষ খবর