মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশে নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু আওয়ামী লীগকে টার্গেট করলে আমার কিছু বলার নেই। তবে আওয়ামী লীগ কারও শক্তির ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় আসেনি। আমি জনগণের শক্তি এবং তাদের ভোটে ক্ষমতায় এসেছি। তিনি বলেন, কে নিষেধাজ্ঞা দেবে বা দেবে না তা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। যারা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন তাদের দেশের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে নিউইয়র্ক অবস্থান করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেন, বিরোধী দলসহ নির্বাচন বানচালের প্রচেষ্টাকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এটা ভালো হবে। কারণ বিএনপি জোট ২০১৩-১৪ সালের মতো নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে কোনো অগ্নিসংযোগ করতে পারবে না। তিনি আশা প্রকাশ করেন, যে দেশ ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তারা উভয় পক্ষ থেকে বা নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি বিবেচনা করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে এমনকি বিদেশ থেকেও যদি কোনো প্রচেষ্টা নেওয়া হয় তা দেশের জনগণ মেনে নেবে না। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘দেশবাসী ভোট দিলে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু বিদেশ থেকে নির্বাচন বানচালের কোনো পদক্ষেপ জনগণ মেনে নেবে না।’ যদি কোনো কারণে নির্বাচন বানচালের কোনো পদক্ষেপের উদ্যোগ কেউ নেয় বাংলাদেশের জনগণ তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। তিনি বলেন, তাঁর দল সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার শুধু মেগা প্রকল্পই তৈরি করেনি, উন্নয়ন তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো অপপ্রচারে কান দেবেন না। সরকারপ্রধান আরও বলেন, কিছু লোক আছে যারা দেশের কল্যাণ চায় না। প্রবাসীরা সচেতন থাকলে এই স্বার্থান্বেষী মহল সফল হতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী এ লক্ষ্যে অপপ্রচারকে অস্বীকার করে যথাযথ উপায়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভোটের অধিকারের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। আর সেই সচেতনতা সৃষ্টি করেছি আমরা। আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বহু নেতা-কর্মীর রক্তের মধ্য দিয়ে আমরা কিন্তু এই নির্বাচনী প্রক্রিয়াটাকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ে এসেছি। ‘আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব’ এ স্লোগান তো আমারই দেওয়া। ভোট ও ভাতের অধিকারের আন্দোলন তো আমরাই করেছি। এখন নির্বাচনে যতটুকু স্বচ্ছতা আছে তা আওয়ামী লীগের জন্য হয়েছে।

আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতৃত্বে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আসছেন কি না- জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা নেই। ছেলেমেয়েকে এনে চেয়ারে বসিয়ে দেব, এটা আমি বিশ্বাস করি না।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ঘরে ফিরে যাক এটা অনেকেই চায় না। শরণার্থী হিসেবে থাকা কত কষ্টের সেটা আমি বুঝি। রোহিঙ্গারা নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত হচ্ছে বলেও? জানান প্রধানমন্ত্রী।

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়প্রত্যয় : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাঁর দৃঢ়সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি হোটেলে নিউইয়র্ক মেট্রোপলিটন আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি নির্বাচন চায় না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে ইনশা আল্লাহ। এ সময় শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, বিএনপি কি আসলেই নির্বাচন চায়? তাদের নেতা কে? শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘পলাতক আসামি, অর্থ চোর, অস্ত্র চোরাচালানকারী, খুনি ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারী (তাদের নেতা) এই যদি একটি দলের নেতা হয়, তবে মানুষ কেন সেই দলকে এবং তাকে ভোট দেবে?’ তিনি বলেন, তারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোট পায়নি এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেনি।

নির্বাচন ঠেকানোর নামে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কত প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এখনো সেই পোড়া মানুষের মুখ দেখলেই বোঝা যাবে যে কী জঘন্য কাজ হয়েছে। যারা এটি করেছে, তাদের মতো আর কেউ ঘৃণ্য হতে পারে না। সরকারপ্রধান বলেন, নৌকায় (দেশের জনগণ) ভোট দেওয়ার কারণে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। যারা বিদেশে থাকেন তাদের বুঝতে হবে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে বিদেশে কারও সঙ্গে কথা বলা যেত না, এখন মানুষ বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। আজ যখন বিশ্বনেতারা (বাংলাদেশের সাফল্য) স্বীকৃতি দিচ্ছেন, তখন আমাদের কিছু পাপাচারী যা বলছে তাতে মনোযোগ দেওয়ার দরকার নেই। শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্তরা এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে ও তাদের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও অ্যাপসের মাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে। মানুষের সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা দরকার।