শিরোনাম
রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
ভিসানীতি নিয়ে যত কথা

নতজানু হওয়ায় খবরদারি

বাম ও অন্যান্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার তীব্র সমালোচনা করেছেন দেশের বাম রাজনৈতিক নেতৃত্ব। এটা দেশের নাগরিকদের জন্য চরম লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন তারা। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের মতো শাসক শ্রেণির রাজনৈতিক দলগুলোর জনবিচ্ছিন্ন অবস্থান ও নতজানু নীতির কারণে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি একটা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের ওপর খবরদারির সুযোগ পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। একই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচন নয়, ভূরাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারে বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে যুক্তরাষ্ট্র এমন ভিসানীতির খড়গ ব্যবহার করছে বলে মনে করছেন তারা।

গতকাল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করেনি, নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। সামনে আরেকটি নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে আমাদের সরকারের বিতর্কিত ভূমিকার কারণেই আজ সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তি বাংলাদেশের ওপরে নানা প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে। সুতরাং এই ভিসানীতি বা নিষেধাজ্ঞার দায় সরকারকে নিতে হবে। আমরা জানি আমেরিকার মতো সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দেশে দেশে আধিপত্য বিস্তার ও নিজের স্বার্থকে সংরক্ষণ করতেই সব কাজ করে। সুতরাং, ভিসানীতির নামে তারা যেটা করছে, এর মূল লক্ষ্য যতটা না ভালো নির্বাচন, তার চেয়ে বেশি বাংলাদেশের ওপরে তাদের আধিপত্য বিস্তার করা। ভূ-রাজনীতিতে এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে বাংলাদেশকে বাধ্য করা। এই চক্র থেকে বের হতে সরকারকে একটা ভালো নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জনগণ যা বলছে, সেই অনুযায়ী ভূমিকা নিতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে এবং সম্প্রতি তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে তা নিন্দনীয়। এটা একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ ও জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। তবে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো আমাদের ওপরে যে খবরদারি করতে পারছে, তার জন্য দায়ী গত ৫২ বছর ধরে যারা এখানে শাসনক্ষমতায় থেকেছে তারা। তাদের নতজানু নীতির কারণেই আজ যুক্তরাষ্ট্রের একজন রাষ্ট্রদূত, যিনি কিনা আমাদের দেশের একজন ডেপুটি সেক্রেটারির সমমর্যাদার, তিনি এসে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে উপদেশ দিচ্ছে। এর জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতের মতো দলগুলো দায়ী। কোনো কিছু হলেই জনগণের কাছে না গিয়ে তারা এসব সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর দূতাবাসগুলোতে দৌড়াদৌড়ি করে। তাদের দুর্বলতা, নতজানু নীতি, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের কারণে, জনবিচ্ছিন্নতার কারণে জনরোষ থেকে মুক্তি পেতে তারা দূতাবাসগুলোতে, সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে ধরনা দেয়। সেই সুযোগে সাম্রাজ্যবাদীরা আমাদের দেশের ওপরে, জনগণের ওপরে, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপরে খবরদারি করার সুযোগ পাচ্ছে। এই বুর্জোয়া শাসকশ্রেণি রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মান-সম্মান সব লুটিয়ে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যের ও লজ্জার। নির্বাচনের ঠিক সাত মাস আগে ভিসানীতি দেওয়া এবং তিন-চার মাস আগে কার্যকর করা- এটা সরকারের জন্য কড়া রাজনৈতিক বার্তা। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে যে, সরকার আরেকটা নীলনকশার নির্বাচন করতে যাচ্ছে। নির্বাচন কেন্দ্র করে সরকারের বেপরোয়া তৎপরতাকে কেন্দ্র করেই মূলত যুক্তরাষ্ট্র এই ভিসানীতি বাস্তবায়ন শুরু করেছে। সরকারের কোনো কথাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশ্বাস করতে পারছে না। সরকার যদি এগুলোকে বিবেচনায় না নেয়, তাহলে এই অবমাননাকর ভিসানীতির খড়গ অনেকের বিরুদ্ধে আসতে পারে। এখনো আলোচনায় রাজনৈতিক সংকট নিরসন সম্ভব। সেই সুযোগ না নিলে সরকারকে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদে পড়তে হতে পারে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর