সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্বাসযোগ্য ভোট হলে ভয় নেই

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত

জুলকার নাইন

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির ঘোষণা দেশের জন্য লজ্জাজনক। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্সের দিক থেকে গভীর সম্পর্ক থাকায় এই ভিসানীতির আলাদা মাত্রা রয়েছে। এরই মধ্যে এই নীতি ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় এখন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বাংলাদেশকেই নিতে হবে। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূূলক, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। যদি সেটা না হয় তাহলে ভয়ের কারণ হবে।

কূটনীতিকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে। ট্রাম্প প্রশাসন এ বিষয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাত না। ২০২২ সাল থেকে এ ধরনের নীতি আরোপ করা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নাইজেরিয়াসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ও কম্বোডিয়ার ওপর এ ধরনের নীতির ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর কোনোটির ক্ষেত্রেই এখন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার অবসান হয়নি। ফলে এ ধরনের নীতির প্রয়োগ হলে তা থেকে উত্তরণ কীভাবে ঘটে তা এখন পর্যন্ত কারও কাছেই স্পষ্ট নয়।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন  হলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। যদি সেটা না হয় তাহলে ভয়ের কারণ হবে। একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই এই ভিসানীতি তারা করেছে। এখন তারা মাত্র প্রয়োগের কথা বলছে। এইটার উদ্দেশ্য হচ্ছে যারা এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছেন যেমন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকার অন্যান্য অংশীদার যারা আছেন তারা সবাই ইতিবাচকভাবে ভূমিকা বজায় রাখবেন বলে তারা প্রত্যাশা করেন। সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের কথা বলেছে। ভয়ভীতি দেখানো যাবে না, মতপ্রকাশে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। সহিংসতা করা যাবে না। অন্য কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। গত ২৪ মে তারা যখন এই নীতি ঘোষণা করেন, তখনই এই মানদন্ডগুলো দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র এটাও ইঙ্গিত করেছে যে, তাদের বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে, কারা এই নেতিবাচক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন তাদের একটি তালিকা তৈরি করবে। তবে এই তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে না। হুয়ায়ুন কবির বলেন, এখন আমরা যদি সবাই সঠিকভাবে নিজেদের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করার মাধ্যমে একটা সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারি তাহলে আমাদের এই ভিসানীতির ব্যাপারে আদৌ চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এই ক্ষেত্রে ভিসানীতি প্রয়োগের প্রয়োজন হবে না। আমি মনে করি, একটা সম্মানজনক ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে এটাই আমাদের কাজ হওয়া উচিত। তার মতে, ভিসানীতি নিয়ে সমস্যা তৈরি করার পেছনে আমাদের যে কোনো ভূমিকা নেই সেই কথাটা বলা যাবে না। আমরা গত ৫২ বছরে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচনী কাঠামো দাঁড় করাতে পারিনি। এটা যদি থাকত তাহলে এই জায়গায় আসার কোনো প্রশ্নই আসত না। আসলে ভিসানীতি আমাদের সবার জন্যই একটা সতর্কবার্তা। আমরা যদি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে নিতে না পারি, তাহলে আমাদের এই জটিলতাটা সামনে আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদের মতে,  যুক্তরাষ্ট্র এই ভিসানীতি দেওয়ার কারণে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ঠিক হবে এই চিন্তা করাটাই ভুল। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যে ঘাটতি আছে সেটি দেশের জনগণকেই ঠিক করতে হবে। বাইরের কোনো রাষ্ট্রের ভিসানীতি দিয়ে এটি ঠিক হবে এই ভাবনাটা সঠিক নয়। কারণ, পশ্চিমা দেশের গণতন্ত্রের চিন্তায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা থাকে। এখন ভিসানীতি প্রয়োগে সে আস্থা বাড়বে না কমবে সেটা দেখার বিষয়। আমার মতে, আস্থা আরও কমবে এবং বিভাজন বাড়বে। আমি মনে করি না ভিসানীতি প্রয়োগ দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ঠিক হবে। একটা প্রতীকী গুরুত্ব থাকতে পারে এই ভিসানীতির। এতে সরকারি দলের মানুষরা হয়তো একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সচেতন হবেন, বিরোধী দলের অনেকেও হয়তো সচেতন হবেন। কিন্তু গণতন্ত্রের ঘাটতি দূর হতে হবে বাংলাদেশের জনগণের মাধ্যমেই।

সর্বশেষ খবর