সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
নির্বাচনী ভাবনা - অধ্যাপক হারুন অর রশিদ

রাজনীতিতে গোঁয়ার্তুমির সুযোগ নেই

রফিকুল ইসলাম রনি

রাজনীতিতে গোঁয়ার্তুমির সুযোগ নেই

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. হারুন-অর রশিদ বলেছেন, রাজনীতিতে গোঁ ধরার জায়গা নেই। গোঁয়ার্তুমিরও সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের মনোভাব এবং বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। সবাইকেই ধীরগতিতে অগ্রসর হওয়া উচিত। গত সোমবার বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচন, দুই দলের মুখোমুখি অবস্থান, সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ নানা ইস্যুতে কথা হয় এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর সঙ্গে।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন দেখতে চান? জানতে চাইলে হারুন-অর রশিদ বলেন, অবশ্যই একটি শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চাই। এতে যেন প্রত্যেক ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন চাই। জামায়াতে ইসলামী ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ চাই। বিশেষ করে বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করুক- সেটা মনে প্রাণে চাই। বিএনপি অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। সরকারও আশ্বাস দিয়েছে, আগামী সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণ ও উৎসবমুখর হবে।

বিএনপি বলেছে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না- তাহলে কী হবে? এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হারুন-অর রশিদ বলেন, আমি মনে করি, নিজের স্বার্থে, বিএনপির অস্তিত্বের জন্য হলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসার ভিন্ন কোনো পথ নেই। তারা নির্বাচনে না এসে যদি ভিন্নপথে হাঁটে, বিশেষ করে ২০১৪ সালের পথে হাঁটলে রাজনৈতিকভাবে বড় ধরনের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। সেটা হবে জনবিচ্ছিন্নতার শামিল। তাদের দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশা দেখা দেবে। যারা ন্যূনতম গণতন্ত্রচর্চা করে তাদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। আমি বিশ্বাস করি, শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশ নেবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল যেমন জনগণকে পরিচালিত করে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোকেও জনগণ থেকে শিক্ষা নিতে হয়। বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন করতে হয়। তারা যে এক দফা আন্দোলন করছে, সেটার কোনো বাস্তবতা নেই। জনগণের সমর্থন না থাকলে কোনো আন্দোলন সফল হয় না। দেড় বছর ধরে আন্দোলন করছে, জনগণ সাড়া দেয়নি। বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে তাদের নির্বাচনে আসা দরকার। 

হারুন-অর রশিদ বলেন, বিএনপি দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক দল হলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফিরে এসে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। রাজনীতিতে গোঁ ধরার সুযোগ নেই। গোঁয়ার্তুমির সুযোগ নেই। পাকিস্তান আমলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কমকা  পর্যালোচনা করলে  দেখতে পাই, আইউবের ‘বুনিয়াদী গণতন্ত্র’ বা গণতন্ত্রের নামে তামাশা করা হয়েছে।  সে সময়েও নির্বাচনে অংশ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু জানতেন, নির্বাচনে জিতে আসার সুযোগ নেই। তারপরও অংশগ্রহণ করেছেন। কাজেই কেউ যদি এক লাফে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, নির্বাচনের আগেই ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চায়- তাহলে সেটার সঙ্গে বাস্তবতা নেই। সবাই যদি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় তাহলে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে ধীরগতিতে অগ্রসর হওয়া উচিত।

সরকারি দলের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন সরকারি দল আওয়ামী লীগের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সরকারের অধীনেও যে সুষ্ঠু ভোট হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগকে সেই চ্যালেঞ্জে পাস করতে হবে। সুষ্ঠু ভোট করে জনগণ, দেশ-বিদেশিদের কাছে আস্থা অর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকারে ফিরে আসার কোনো অবস্থা নেই। সরকারের অবস্থানই সঠিক। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।  দেশের একটা সংবিধান রয়েছে, সেখানে বিভেদ চলবে না। কথায় কথায় সংবিধান পরিবর্তন করা সম্ভব না। আর দেশের জনগণও চায় না, সংবিধান বারবার সংশোধন হোক। কাজেই বিএনপির  অসাংবিধানিক দাবি গ্রহণযোগ্য হবে না বলেই আমি মনে করি। মুখোমুখি অবস্থানের অবসান ঘটবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

নির্বাচন ঘিরে আগামীতে কোনো সংকট সৃষ্টি হতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংকট সৃষ্টি হতে পারে। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সংকট সৃষ্টি হতে পারে। তারা যদি নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়, যেমনটি ২০১৪ সালে করেছিল। কিন্তু পারেনি। বিএনপি ভেবেছিল একটি অসাংবিধান সরকার আসুক। কিন্তু আসেনি। এবারও আসবে না। আর নির্বাচনও তারা প্রতিহত করতে পারবে না। সরকার সবকিছু মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে বলেই আমার  বিশ্বাস। আর বিএনপি এখন বিদেশিদের কাঁধে ভর করছে। তারা ভেবেছে বিদেশিরা ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- সেটা ভাবার সুযোগ নেই। কারণ বিদেশিরা যথাসময়েই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। বিদেশিরা কারও স্থায়ী বন্ধু, স্থায়ী শত্রু নন। অতীত অভিজ্ঞতা সেটাই প্রমাণ করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সর্বশেষ খবর