মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

এবার ভারতে ট্রানজিট চাইবে বাংলাদেশ

♦ লক্ষ্য চীন পাকিস্তান আফগানিস্তানে পণ্য পরিবহন ♦ ঢাকায় আজ শুরু দুই দিনব্যাপী জেটিসির বৈঠক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

এবার ভারতে ট্রানজিট চাইবে বাংলাদেশ

গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর শেষে যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ ছিল- ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে যেতে বাংলাদেশকে ট্রানজিট সুবিধা দেবে দেশটি। এবার সে ঘোষণার বাস্তবায়ন চাইছে বাংলাদেশ। আজ থেকে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দুই দিনব্যাপী জয়েন্ট ট্রেড কমিশন (জেটিসি)-এর বৈঠকে বাংলাদেশ ভারতের কাছে ট্রানজিট সুবিধা চাইবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) নূর মো. মাহবুবুল হক এবং ভারতের পক্ষে দেশটির বাণিজ্য দফতরের সংশ্লিষ্ট উইং প্রধান বিপুল বানসালি নেতৃত্ব দেবেন। বৈঠকে ট্রানজিট ইস্যু ছাড়াও কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সেপা), কোটায় নিত্যপণ্য আমদানি, বর্ডার হাট নির্মাণ এবং দুই দেশের বাণিজ্যে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা নিয়ে আলোচনা হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সাধারণ বাণিজ্যিক ইস্যু ছাড়াও এবারের বৈঠকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ট্রানজিট সুবিধায়। আমরা গুরুত্বের সঙ্গে এই প্রসঙ্গটি তুলব। শুধু নেপাল, ভুটান নয়- ভারতের পার্শ্ববর্তী অন্য দেশগুলোতেও (চীন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান) পণ্য পরিবহনে দেশটির ভূখণ্ড ব্যবহারের সুযোগ চাওয়া হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। সূত্রগুলো জানায়, ২০১৫ সালে করা বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় দুটি দেশ একে অপরের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে ট্রানজিট সুবিধা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী ভারত এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। এ ছাড়া জলপথে ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা নিতে ভারতের সঙ্গে নৌ প্রটোকল চুক্তিও করেছে বিআইডব্লিউটিএ। এবার বাংলাদেশ চাইছে এসব সুবিধা ভারতও কার্যকর করুক। কর্মকর্তারা জানান, তৃতীয় দেশে ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশকে একই ধরনের সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে ভারত নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও দেশটি যেসব রুট প্রস্তাব করেছে-সেগুলোকে লাভজনক মনে করছে না এ সংক্রান্ত একটি কমিটি। বাণিজ্য চুক্তির আওতায় সড়ক, রেল ও নৌপথে ট্রানশিপমেন্টের আওতায় বাংলাদেশকে ৩টি রুটে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত। এগুলো হচ্ছে : (১) হিমাগড় এলসি স্টেশন, কলকাতা অথবা হলদিয়া সমুদ্রবন্দর দিয়ে ঢুকে মুম্বাইয়ের নাভা অথবা মান্দ্রা হয়ে তৃতীয় দেশ; (২) পেট্রাপোল এলসি স্টেশন অথবা কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে ঢুকে মুম্বাইয়ের নাভা সেভা হয়ে সড়কপথে তৃতীয় দেশে এবং (৩) পেট্রাপোল অথবা গেদে এলসি স্টেশন দিয়ে ঢুকে রেলপথে মুম্বাই হয়ে তৃতীয় দেশে। ট্রানজিট বিষয়ে সরকারের করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে গত ২২ আগস্ট একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়। ওই সভায় সরকারের একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির দায়িত্ব ছিল, ভারতের প্রস্তাবিত রুট তিনটি দিয়ে চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ সম্পর্ক গড়ে তোলার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার। কমিটির এক সদস্য জানান, মুম্বাই হয়ে তৃতীয় দেশে যাওয়ার যে রুট প্রস্তাব করেছে ভারত-সেই পথে মুম্বাই পৌঁছাতে বাংলাদেশি পণ্যবাহী যানের দীর্ঘ সময় লাগবে। সে কারণে সহজ ও কম সময়ে পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়- এমন কোনো রুটে বাংলাদেশকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে জেটিসির বৈঠকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আঞ্চলিক ট্রানজিটের ক্ষেত্রে আমরা শুধু ‘বিবিআইএন’ (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান) নিয়ে কথা বলছি। চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে কার্যকর যোগাযোগ বা কানেকটিভিটিকে সীমাবদ্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। সে কারণে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে- এমন সব দেশেই ট্রানজিট সুবিধা চাইবে।

সর্বশেষ খবর