বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রতিদিনই রাজপথে দুই দল

মানুষ অধিকার ফিরে পেতে সংগ্রাম করছে

রোডমার্চে মির্জা আব্বাস

প্রতিদিন ডেস্ক

মানুষ অধিকার ফিরে পেতে সংগ্রাম করছে

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল খুলনা বিভাগে বিএনপির রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ কর্মসূচিতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন। এতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের মানুষ নিজের অধিকার ফিরে পেতে সংগ্রাম করছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

খুলনা : বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, এ সরকার কিছু মানুষকে হত্যা করতে পারবে, গুম গ্রেফতার করতে পারবে, কিন্তু গণতন্ত্রকামী মানুষের জোয়ার ঠেকাতে পারবে না। দেশের মানুষ নিজের অধিকার ফিরে পেতে সংগ্রাম করছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তিনি সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, এখনো সময় আছে জনগণের কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চান, দেশের মানুষ ক্ষমা করলেও করতে পারে। খুলনায় বিভাগীয় রোডমার্চ শেষে গতকাল নগরীর শিববাড়ী মোড়ে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা আব্বাস বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। নির্বাচন করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই করতে হবে। জনগণ ভোটাধিকার ফেরত চায়।

তিনি বলেন, আমেরিকায় জয়ের যে সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়েছে তা তার নয়। ওই সম্পদ আমাদের। তিনি এমন কোনো চাকরি করেন না যে এত সম্পদ তৈরি করতে পারেন। এই সরকারের আমলে ১ লাখ ৯ হাজার বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। ৮ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হারিয়ে গেছে। ব্যাংকে সোনা রাখলে সেটা তামা হয়ে যায়। এই সরকারের কাছে সবাই অনিরাপদ।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদেরই আমাদের দেশকে বাঁচাতে হবে। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু বলেন, এ সরকারের পদত্যাগের পরে একটি জাতীয় সরকার গঠন করে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা মেহেদী হাসান রুমি, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, রকিবুল ইসলাম বকুল, আজিজুল বারী হেলাল, শেখ সোহরাব উদ্দিন, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।

এর আগে রাত পৌনে ৮টার দিকে খুলনা শিববাড়ী মোড়ে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছায় রোডমার্চ। দুপুর থেকেই সমাবেশস্থলে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত হন।

যশোর : যশোরের রোডমার্চে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘গত ১৫ বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ আজ মাঠে নেমে এসেছে। আমরা বলছি না যে খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী বানান। বলছি না যে আমাদের মন্ত্রী বানান। আমরা বলছি, আমাদের ভোটের অধিকারটা দেন। ভোটের অধিকার চাইলেই পোশাকধারীরা আমাদের পেছনে লেগে যাচ্ছে। এ যেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, আমাদের শোষণ ও শাসন করছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই- আমরা কারও রাজত্বে বসবাস করি না।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক খালি হয়ে গেছে। রিজার্ভ নাই। সমস্ত কিছু ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ডলারের দাম বেড়ে গেছে। আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক সমস্যায় পড়ে যাবে দেশ।’

বিএনপির খুলনা বিভাগীয় রোডমার্চ চলাকালে গতকাল যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার পুলেরহাট, যশোর সদরের মুড়লী ও অভয়নগর থানার নওয়াপাড়ায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন তিনি। ঝিনাইদহ থেকে মাগুরা হয়ে বেলা ২টায় রোডমার্চ যশোরের পুলেরহাটে পৌঁছায়। সেখানে সভা শেষে বিকাল ৪টায় যশোর শহরের মুড়লি মোড়ে সভায় বক্তৃতা করেন নেতারা। এসব পথসভা দৃশ্যত জনসভায় রূপ নেয়। শত শত মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে রোডমার্চকে স্বাগত জানায়। সভাগুলোয় মির্জা আব্বাস ছাড়াও দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায়চৌধুরী, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের রোডমার্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘আমরা দেশ স্বাধীন করেছি গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। কোনো রাজা-রানির রাজত্ব করার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করিনি। দেশে আজ কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা হয়েছে। দেশ আজ হীরক রাজার দেশে পরিণত হয়েছে। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। এখন দড়ি ধরে টান মারার সময় এসেছে। বর্তমান সরকারের অবস্থাও হীরক রাজার মতোই হবে।’

মির্জা আব্বাস গতকাল ঝিনাইদহ শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে খুলনা অভিমুখে রোডমার্চ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এ অনুষ্ঠানে পৌঁছাতে আমাকে আড়াই কিলোমিটার জনসমুদ্র পাড়ি দিতে হয়েছে। দেখে মনে হয়েছে আমরা প্রাকবিজয় উৎসব পালন করছি।’ মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘আমি ম্যাডামকে বলে এসেছি সারা দেশের মানুষ আজ আপনার জন্য চিন্তিত। আপনি বাংলাদেশের জন্য যা করেছেন তা মানুষ ভুলবে না। দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে এ সরকারকে বাধ্য করা হবে। এক দফার আন্দোলন চূড়ান্ত করেই দেশের মানুষ ঘরে ফিরবে ইনশা আল্লাহ।’

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ বিশ্বাসের (ছোট) পরিচালনায় রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশে বরকতউল্লা বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায়চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদী আহম্মেদ রুমী, সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দীন, বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান ও কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্তকুমার কুণ্ডু, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এস এম মশিয়ুর রহমান, মেহেরপুরের মাসুদ অরুণ, চুয়াডাঙ্গার মাহবুব হাসান খান বাবু, শরিফুজ্জামানসহ জেলা ও উপজেলা বিএনপি নেতারা বক্তব্য দেন।

বাগেরহাট : সড়কের মোড়ে মোড়ে বাধা উপেক্ষা করে খুলনার রোডমার্চে অংশ নিয়েছেন বাগেরহাট বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের কাটাখালী জিরো পয়েন্ট মোড়ে মিছিলসহকারে রামপাল, মোংলা, মোল্লাহাট, ফকিরহাট ও চিতলমারী উপজেলার কয়েক হাজার নেতা-কর্মী জড়ো হন। এরপর জেলা বিএনপি নেতা ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম ও ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানার নেতৃত্বে মিছিল করতে করতে শাসকদলের বাধা উপেক্ষা করে মোটরসাইকেল, পিকআপ ও মাহেন্দ্রযোগে খুলনায় যান। বাগেরহাটের পাঁচ উপজেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মোড়ে আসার আগে কাটাখালী জিরো পয়েন্টে সকাল থেকেই শাসকদলের কিছু নেতা-কর্মী লাঠি হাতে মহড়া দিয়ে প্রতিপক্ষের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে পিটিয়ে আহত করলেও বিকালে রামপাল, মোংলা, মোল্লাহাট, ফকিরহাট ও চিতলমারী উপজেলার কয়েক হাজার নেতা-কর্মী জড়ো হলে তারা গা-ঢাকা দেন।

 

সর্বশেষ খবর