বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেড় বছরে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে তিন গুণ

ডলার সংকট ও পরিবহন ব্যয়কে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে দেড় বছরে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন গুণ। এজন্য ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন ডলার সংকট ও পরিবহন ব্যয়কে। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্বে খাদ্য সরবরাহ চেন ভেঙে গেছে। এ ছাড়া রয়েছে ডলার সংকট, বেড়েছে পরিবহন ব্যয়। প্রত্যাশিত এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এসবের প্রভাবেই বেড়েছে ভোগ্যপণ্যের দাম।’

খাতুনগঞ্জের কয়েকজন সাধারণ আড়তদারের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং জ্বালানি তেলের দামের কারণে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় কিছু বেড়েছে সত্য। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে হাতিয়ে নিচ্ছেন শত শত কোটি টাকা। সিন্ডিকেট সদস্যরা একেক সময় একেক পণ্য টার্গেট করছেন। তারাই চাল, ডাল, আলুসহ অন্যান্য পণ্যের বাজারে কারসাজি করছেন। এদের প্রতিরোধ না করলে ভোগ্যপণ্যের বাজার আরও অস্থির হবে।

গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অস্থির হতে থাকে ভোগ্যপণ্যের বাজার। এ ছাড়া ডলার সংকট, প্রত্যাশিত এলসি খুলতে না পারা এবং বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে হু হু করে বাড়ানো হয় ভোগ্যপণ্যের দাম। দেড় বছরে খাতুনগঞ্জে কোনো কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে দুই থেকে তিন গুণ। গত বছরের মার্চে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি চিনি ৭২ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গত রবিবার বিক্রি হয়েছে ১২৪ টাকা। একই সময় পিঁয়াজের দাম ছিল ৩০-৩৩ টাকা, বর্তমানে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা। সাধারণ মানের চাল রকমভেদে কেজি ৪০ থেকে ৪৮ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। অন্যান্য চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। একইভাবে ৬৩ টাকার প্রিমিয়াম ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। ৬১ টাকার সাধারণ ছোলা ৭৫ টাকা। ৪৮ টাকার ছোলার ডাল ৮০ টাকা। ৪৭ টাকার মটর ডাল ৫৫ টাকা। ৫৫ টাকার মসুর ডাল ৯৫ টাকা। ২৫০ টাকা কেজির কিশমিশ ৪৭৫ টাকা। ৪২ টাকা কেজির চিড়া ৪৮ টাকা। ১৪৫ টাকার সয়াবিন তেল ১৫৫ টাকা। ১২০ টাকার পাম অয়েল ১২৪ টাকা। ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজির এলাচ ২ হাজার টাকা। ১ হাজার ২০ টাকার লবঙ্গ ১ হাজার ৩৮০ টাকা। ৩৫০ টাকার চিকন জিরা ১ হাজার ৮০ টাকা। ২ হাজার ৬০০ টাকা মণের সরিষা ২ হাজার ৯৮৫ টাকা। ১ হাজার ১৩০ টাকা মণের গম ১ হাজার ৩৪৩ টাকা।

চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনামুল হক বলেন, গত দেড় বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৭ থেকে ১০ টাকা। অন্যান্য চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ৩০ টাকা। তিনি বলেন, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কমে গেছে। একইভাবে কিছু মিল মালিক ও কৃষক ধান মজুদ বৃদ্ধি করেছেন। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘গত বছর ডলার ৮৬ টাকায় কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে ১১৫ টাকায়। এর প্রভাব পড়েছে আমদানি পণ্যে। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। বাজারে ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও আমদানি ব্যয় বাড়ায় পণ্যের দাম বেড়েছে।’ আড়তদার সোলায়মান বাদশা বলেন, ‘ইউক্রেন সংকট শুরু হওয়ার পর থেকেই ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। বৈশি^ক রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল না হলে সংকট আরও বাড়বে।’

 

 

সর্বশেষ খবর