বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নারী কেলেঙ্কারির সেই ডিসিকে পদোন্নতি

ওয়াজেদ হীরা

অন্যের স্ত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের কলঙ্ক নিয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদ হারানো কর্মকর্তাকে শাস্তি না দিয়ে উল্টো যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের ২২ ব্যাচের ওই কর্মকর্তার নাম এ এন এম ফয়জুল হক। যিনি সম্প্রতি ৩২১ জন যুগ্ম-সচিব হওয়াদের মধ্যে একজন। বর্তমানে পরিকল্পনা বিভাগের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে সড়ক পরিবহন উইংয়ে যুগ্মপ্রধান (সংযুক্ত) হিসেবে কর্মরত। নারী কেলেঙ্কারির মতো ঘটনার পর পদোন্নতি পাওয়ায় ব্যাচের অন্য কর্মকর্তারা বিষয়টিকে বিব্রতকর হিসেবে দেখছেন। দোষ না থাকলে কেন সে সময় ডিসি পদ থেকে সরানো হয়েছিল অন্য কর্মকর্তারা সেই প্রশ্নও তুলেছেন।

এদিকে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদন করেছেন ওই নারীর স্বামী মো. ফকরুল। যার কপি রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই প্রতিবেদকের কাছে। যদিও এসব অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ফয়জুল হক বলেন, ঘটনা সত্য হলে তো আমার পদোন্নতি হতো না। ওই ব্যক্তি আমার নামে প্রতিনিয়ত মিথ্যা অভিযোগ করে যাচ্ছেন। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত একটি তদন্তও হয়নি। তদন্ত হলে আমাকে নোটিস দেওয়া হতো। মিথ্যা একটি অভিযোগে আমার সম্মানহানি করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি সাইকো প্রকৃতির। যা উনার স্ত্রী লিখিত দিয়ে বলেছেন এবং এসব কারণে তাকে তালাক দিয়েছেন। যে নারীকে নিয়ে আমার নামে এসব অভিযোগ তার সঙ্গে জীবনে মাত্র একবারই দেখা হয়েছিল। তার প্রয়োজনে সাহায্যের জন্য এসেছিল।

এদিকে সরকারি এ কর্মকর্তার বিভাগীয় শাস্তি চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ওই ভুক্তভোগী ব্যক্তি গত মাসে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে আবেদন করেছেন। আবেদনে পূর্বের ঘটনা উল্লেখ করে লিখেছেন- মন্ত্রিপরিষদে আমার করা আবেদনটি প্রত্যাহার করে নিতে ফয়জুল হক ভাড়াটে সন্ত্রাসী দ্বারা আমাকে খুনের হুমকি প্রদান করেছে। আমি এখনো মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে জীবন-যাপন করছি। এই নষ্ট চরিত্র কর্মকর্তার অপরাধের কারণে পরিবার আজ বিচ্ছিন্ন, আমার দুটি শিশুসন্তান ও আমার জীবন আজ বিপন্ন। অতিসত্বর বিভাগীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন আবেদনে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, চাকরি বিধিতে উল্লিখিত বিষয়ের বাইরে অনেক সময় বিভাগীয় প্রসেডিং করা যায় না। এক্ষেত্রে কী ঘটেছে সেটি জানতে হবে। আর ওই সময় একটি প্রেক্ষাপটে তাকে ডিসি থেকে সরানো হয়।

অভিযোগকারী মো. ফকরুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার পরিবার, সন্তান সবার জীবনে একটা বিপর্যয় এসেছে এসবের কারণে। সংসারটা শেষ হয়ে গেল, এখন আমরা সেপারেশনে আছি। আমি শাস্তি চেয়ে মন্ত্রিপরিষদে আবেদন করেছি।

অভিযুক্ত কর্মকর্তা এ এন এম ফয়জুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এসব অভিযোগ দেওয়া ব্যক্তির বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লারহাটে। ওই পরিবারের সবাই জামায়াত পরিবারের লোক। তাকে বিভিন্ন লোক দিয়ে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, আমার মতো কর্মকর্তার পক্ষে এসব করা কি সম্ভব? আমি সরকারের অর্থমন্ত্রীর পিএস ছিলাম। পদোন্নতির আগেও অনেক অভিযোগ বোর্ডের সদস্যদের কাছে দিয়েছিল। আমি ধরেই নিয়েছিলাম আমার পদোন্নতি হবে না। আল্লাহ সহায় ছিলেন। তার সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

এদিকে, ২২ ব্যাচের অন্যান্য কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুগ্ম-সচিব হওয়া এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটি আমার মতো অনেকের কাছেই বিব্রতকর। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, মন্ত্রণালয় তদন্তে কিছু পায়নি তাই হয়তো পদোন্নতি পেয়েছেন। যদিও অভিযুক্ত ব্যক্তি বলেছেন তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্তই হয়নি।

সর্বশেষ খবর