বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
নির্বাচনী ভাবনা

১৪ ও ১৮-এর নির্বাচন আর কখনো হবে না

কর্নেল অলি আহমদ (অব.)

শফিউল আলম দোলন

১৪ ও ১৮-এর নির্বাচন আর কখনো হবে না

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির-এলডিপি প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বলেছেন, এই সরকারের ওপর জনগণের আস্থা ও সমর্থন নেই। আন্তর্জাতিকভাবেও একঘরে হয়ে পড়েছে সরকার। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন বাংলাদেশে আর কখনো হবে না। কোনো বিরোধী দল এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে উৎসবমুখর পরিবেশে। এ অবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া এই সরকারের সামনে কোনো বিকল্প নেই। সবদিক বিবেচনা করলে স্পষ্টত বোঝা যায়- এ সরকারকে বিদায় নিতেই হবে। এখন যত তাড়াতাড়ি ক্ষমতা ত্যাগ করে- ততই মঙ্গল।

‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা কী, বিদ্যমান সংবিধানের ভিতরে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব কি না; সরকার কি এক তরফা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে? নির্বাচন নিয়ে মার্কিন ভিসানীতির প্রভাব কী!’- বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেন। এলডিপি প্রেসিডেন্ট মার্কিন ভিসানীতি সম্পর্কে বলেন, ভিসানীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ যতই হাঁকা-বকা করুক না কেন- এই সরকারের জন্য এটি একটি মরণফাঁদ। এই ফাঁদ থেকে বের হওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব। তাছাড়া আন্তর্জাতিকভাবেও সমর্থন হারিয়ে ফেলছে এই সরকার। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ধ্বংস করেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বর্তমান সরকার দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এই ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে উদ্ধার করা তাদের পক্ষে আর সম্ভব নয়। কাজেই আর হাঁকা-বকা করে কোনো লাভ নেই, ক্ষমতাসীন সরকারকে এবার রাস্তা মাপতেই হবে। ক্ষমতার লোভ ত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় বড় ধরনের মাশুল দিতে হবে তাদেরকে। কারণ সারা দেশে জনগণ ফুঁসে উঠেছে। তারা আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। ‘সরকার সংবিধানের বাইরে যাবে না, বিদ্যমান সংবিধানের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন করতে চায়। সেদিকেই তারা এগোচ্ছে।’ এটাকে কীভাবে দেখেন? জবাবে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ১৯৯০ সালে সংবিধান কোথায় ছিল, ২০০৮ সালে সংবিধান কোথায় ছিল? সুতরাং সংবিধানের দোহাই দিয়ে কোনো লাভ হবে না। বিদায় নিতেই হবে। বরং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা দিয়ে দেশকে সংঘাত ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতে তাদের শেষ রক্ষা হবে না। অলি আহমদ বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। বিনা চিকিৎসায় বেগম জিয়ার মৃত্যু হলে তা- অত্যন্ত অশুভ পরিণতি ডেকে আনবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ধীরে ধীরে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনতিবিলম্বে তার লিভার পরিবর্তন করা অতীব জরুরি। অন্যথায় অপ্রত্যাশিতভাবে যে কোনো সময় বিনা চিকিৎসায় তিনি মারা যেতে পারেন। তিনি মারা গেলে সরকারকে কঠোর জবাবদিহিতা করতে হবে। জনগণকে মোকাবিলা করতে হবে। তখন হয়তো অনেকের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। তাই সাবধান করে দিচ্ছি- আর বেশি দেরি করা উচিত হবে না। কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে, সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং সংবিধানকে কার্যকর করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বহুদিন থেকে সরকারকে সতর্ক করে বলে আসছি যে, দেশে গণতন্ত্র নাই, আইনের শাসন নাই, সুশাসন নাই, ন্যায় বিচার নাই। দেশের জনগণ পুলিশ ও মাস্তানদের হাতে জিম্মি এবং প্রতিনিয়তি হয়রানির শিকার হচ্ছে। মৌলিক অধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। দিনের বেলা নির্বাচন হয় না। আর যদি নির্বাচন দিনের বেলা হয়ও তবে সেটি হয় নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন। জনগণ ২০১৪ সালের পর থেকে প্রকৃত অর্থে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়নি। সমগ্র দেশ মাস্তান বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে। মনে হয় আমরা অসভ্য সমাজে বসবাস করছি। কর্নেল অলি আরও বলেন, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে জনগণের অধিকার কিছুতেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ জন্যে যত দ্রুত সম্ভব এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। দেশকে আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। অন্যথায় আত্মসম্মান নিয়ে দেশে বসবাস করা সম্ভব নয়। তাই আসুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে বিভিন্ন দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করি।

 

সর্বশেষ খবর