শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সংসদের পর উপজেলা নির্বাচন

মার্চ-এপ্রিলে ধাপে ধাপে ভোট, ফেব্রুয়ারিতে তফসিল

গোলাম রাব্বানী

সংসদের পর উপজেলা নির্বাচন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরই দেশব্যাপী প্রায় ৫০০ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচনের মালামালের সঙ্গেই উপজেলা নির্বাচনের মালামাল কেনাকাটা করছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। ইসি বলছে, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির শুরুতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এরপর মার্চ-এপ্রিলে উপজেলা নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। তবে মার্চ-এপ্রিলে উপজেলা নির্বাচন করার জন্য জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারিতে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে। এবার উপজেলা নির্বাচন একদিনে নাকি ধাপে ধাপে হবে সেই সিদ্ধান্ত এখন নির্বাচন কমিশন নেয়নি। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ধাপে ধাপে উপজেলা নির্বাচন হলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট গ্রহণ হবে।

এদিকে উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। বিএনপির অনেক নেতারও উপজেলা পরিষদে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার আভাস মিলেছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তৎপরতা শুরু করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ভোট নিয়ে আলাপ-আলোচনাও হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাচনের আগে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথাও ভাবছেন। পরে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলে তারা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চাইবেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি রাখছেন।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, উপজেলা নির্বাচনের জন্য স্ট্যাম্প প্যাড ছাড়া অন্যান্য নির্বাচন মালামালের টেন্ডার হয়েছে। আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের হাতে সব মালামাল চলে আসবে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র এবং ভোটার তালিকা দিয়েই উপজেলা নির্বাচন করবে ইসি; এ জন্য অনেক কাজেই এগিয়ে থাকবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, সংসদের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মালামালও কেনা হচ্ছে। কারণ সংসদ নির্বাচনের পর পরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর ১৯ জানুয়ারি আগের নির্বাচন কমিশন উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মোট ছয়টি ধাপে ওই নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় এক মাস পর ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন হয় পাঁচ ধাপে, ওই বছরের ১০ মার্চ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত নির্বাচন চলে।

উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠার পর এবার ষষ্ঠবারের মতো নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ পঞ্চম উপজেলা নির্বাচন হয় ২০১৯ সালে। উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখের আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উল্লেখ্য, পরিষদের প্রথম বৈঠক থেকে মেয়াদ শুরু হয়। সেই হিসাবে নির্বাচনের সময় শুরু হবে চলতি বছরের নভেম্বরের শুরু থেকেই। আগামী বছরের মার্চ হচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের উপযুক্ত সময়।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, গতবারের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান- এ তিনটি পদেই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সে কারণে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে উপজেলা পরিষদের প্রার্থী মনোনয়নের কাজও করতে হবে। গতবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ শুধু চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়। ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদটি দলের আগ্রহী সব প্রার্থীর জন্য উন্মুক্ত রাখে।

গতবার উপজেলা পরিষদের পঞ্চম সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ব্যবহার হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী কয়েকটি দল ছাড়া অন্য দলগুলো অংশ নেয়নি। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় মূলত নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে। প্রথম ধাপে ভোট গ্রহণ হয় ২০১৯ সালের ১০ মার্চ। এই ধাপে রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার সব উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৪ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ এবং পঞ্চম ধাপে ১৮ জুন ভোট গ্রহণ হয়। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ৪৬৩টি উপজেলার মধ্যে ৩১৫টিতে জয়লাভ করেন। এর মধ্যে ১০৯টি জয়লাভ করেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হন ১৪৪টি উপজেলায়। তারা ছিলেন বেশির ভাগ আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থী। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীরা তিনটি উপজেলায় এবং জাতীয় পার্টি-জেপির প্রার্থী একটি উপজেলায় জয়লাভ করেন।

সর্বশেষ খবর