শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
ওয়াশিংটন ডিসিতে সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা

দেশের ভাবমূর্তি আরও জোরদারে কাজ করুন

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

দেশের ভাবমূর্তি আরও জোরদারে কাজ করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ভার্জিনিয়ার গলফ ক্লাবের এই ছবি গতকাল ফেসবুকে শেয়ার করেন তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় -সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে দেশ আবার অন্ধকার যুগে ফিরে যাবে। তবে আমি জানি, বাংলাদেশের মানুষ আর অন্ধকারে ফিরে যেতে চাইবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণই আমার শক্তি। দেশবাসী আমার পরিবার এবং আমি এটা মাথায় রেখেই রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। বুধবার ওয়াশিংটন ডিসির হলিডে এক্সপ্রেস ইন হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত সরকারের ২৯ বছরকে অন্ধকার যুগ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের শাসনামলে নিজেদের ভাগ্য গড়তে অনেকে ব্যস্ত থাকায় তারা জনগণের জন্য কিছুই করেনি। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র বাংলাদেশের মানুষের জীবন থেকে ২৯ বছর মুছে দিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়ন করে অনেক বছরের ঘাটতি পূরণ করেছে। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরা তাঁর সরকারের রূপকল্প-২০৪১ অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও স্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে দেশ পরিচালনা করায় বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ২০২৬ সাল থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং যার জন্য তারা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথযাত্রাকে মসৃণ করার উপায় খুঁজে বের করতে তাঁর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে। তিনি বলেন, আমি জানি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রায় কোনো জটিলতা হবে না। শেখ হাসিনা বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচন এ কারণে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের অংশ হিসেবে তাঁরা ইতোমধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে একটি কমিটি গঠন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ এখনো বিশ্বাস করে যে, আওয়ামী লীগই পারে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে এবং দেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে।

শেখ হাসিনা বলেন, তারা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বিনামূল্যে বাড়ি দিচ্ছেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছেন, আড়াই কোটি শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দিচ্ছেন, যাতে দেশবাসী আর কষ্ট না পান। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে আমরা পরিকল্পিতভাবে সবকিছু করে যাচ্ছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশের মানুষের কেউ গৃহহীন ও অতি দরিদ্র থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছি এবং এখন উন্নয়নের পথে যাত্রা অব্যাহত রাখায় দেশকে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছি। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, সতর্ক থাকুন, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যাতে কেউ আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে।

বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বিশ্ব অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা ষড়যন্ত্র এবং অপপ্রচারের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংস করতে নেমেছে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, দেশে-বিদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ দেখিয়ে দিয়ে আমাদের তাদের উচিত শিক্ষা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আমেরিকায় তাদের এলাকার কংগ্রেসম্যান, সিনেট সদস্য এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার করতে এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত চক্রের বাংলাদেশকে ধ্বংসের মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণেই বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। এত নিষ্ঠা ও ভালোবাসা নিয়ে দেশের উন্নয়নে আর কেউ কাজ করবে না। আমরা চাই, অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক এবং এক্ষেত্রে কেউ যেন বাধা সৃষ্টি করতে না পারে। সমাবেশে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, মিশিগান, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস থেকেও নেতা-কর্মীরা অংশ নিতে আসেন।

প্রধানমন্ত্রী ১৭ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগদানের পর নিউইয়র্ক থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসি পৌঁছেন। ডিসি থেকে গতকাল তাঁর লন্ডনে রওনা দেওয়ার কথা।

ভার্জিনিয়ায় মায়ের জন্মদিন উদযাপন করেছেন জয় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় নৈশভোজের আয়োজনের মাধ্যমে ভার্জিনিয়ায় মায়ের জন্মদিন উদযাপন করেছেন। জয় তার ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ছবি শেয়ার করেছেন। যেখানে তিনি লিখেছেন- ‘পরিবারের সাথে মায়ের জন্মদিনের ডিনারে ভার্জিনিয়ায় আমার গলফ ক্লাবে’। ছবিতে শেখ হাসিনা, জয়সহ আরও তিন আত্মীয়কে দেখা যায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান ১৭ সেপ্টেম্বর। অধিবেশন শেষে ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে যান। সেখানেই তাঁর জন্মদিন উদযাপন করেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

এদিকে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই বাংলাদেশে দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে নানা আয়োজন ও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপন করেছে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। ঈদে মিলাদুন্নবী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনাসহ আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সফলতা কামনা করে দোয়া করা হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে তাঁকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় দাদার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

সর্বশেষ খবর