শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
নির্বাচনী ভাবনা

সামনে বহু দুর্যোগ দেখতে পাচ্ছি

ড. তোফায়েল আহমেদ

ওয়াজেদ হীরা ও আফরিদ সাররাফ আলী

সামনে বহু দুর্যোগ দেখতে পাচ্ছি

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বলেছেন, একটা ঘোর ঘনঘটা দেখছি নির্বাচন নিয়ে, সামনে বহু দুর্যোগ দেখতে পাচ্ছি, তবে আশা ছাড়িনি। অন্ধকার যত গভীর হয়, ভোরের আলো নিকটে আসে। নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিকভাবে সুন্দর সমাধানের আশার দিকে তাকিয়ে আছি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। নির্বাচনের সার্বিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সবার অংশগ্রহণের জন্য সংবিধানের পরিবর্তন করা যেতে পারে। একরাতে সংবিধান সংস্কার হয়ে গেছে। এ সংবিধানের অধীনে যে নির্বাচন করে ফেলবে এমনটি হয়তো হবে না। বিরোধী দলগুলো আগের অবস্থায় নেই, তাদের মিত্র সংখ্যা বেড়েছে, মাঠে লোক বেশি নামাচ্ছে, এসব বাইরের শক্তিগুলোকেও নাড়া দিচ্ছে। এসব নিয়ে সরকারের ওপর সামনে চাপ বাড়বে। সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে নির্বাচনের পরে সংকট আরও বাড়বে বলেও মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

নির্বাচনের তোড়জোড় এবং কেমন নির্বাচন আশা করেন- জানতে চাইলে বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে বিষয়টি আমি বিশ্বাস করি না। নির্বাচন পরিচালনার জন্য সরকার আর নির্বাচন কমিশন স্বাভাবিকভাবে যা করার সেটি করছে। সারা দেশে নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়নি। মানুষ সংশয়ে আছে নির্বাচন হবে কি না, হলেও কীভাবে হবে। ২০০৭ সালে সেই সময়ের রাজনৈতিক অবস্থার মধ্যেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সরকার বলছে, যে কোনো কিছুর বিনিময়ে নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন জোর দিয়ে এ কথা বলেনি। তারা নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ দিয়েছে। বাংলাদেশে এরকম সংকট আরও দুবার হয়েছে আগে। তৃতীয়বার এলো এ সংকট। তিনি আরও বলেন, আগে বিদেশিরা আমাদের নির্বাচন নিয়ে এমন তৎপরতা চালাত না। আমাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক সম্পর্র্ক যাদের সঙ্গে আছে, তারা আগে এভাবে জড়ায়নি। এবার পশ্চিমা শক্তি যোগ দিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছে। এরকম ব্যবস্থার মধ্যে নির্বাচন হবে সেটি কীভাবে বিশ্বাস করব? নির্বাচন হতে পারে কিন্তু এখানে অংশগ্রহণ হবে কি না, বৈধতা পাবে কি না- এ প্রশ্নগুলা থেকেই যাচ্ছে। তিনি বলেন, দলীয় সরকার বা নির্দলীয় সরকার বুঝি না। একটা বড় দল আগে থেকেই বলে রেখেছে তারা নির্বাচনে যাবে না। সঙ্গে আরও অনেক দল আছে। এখন যারা নির্বাচন করবেন তারা কি একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবেন কি না, সে প্রশ্ন আমাদের মাথা থেকে যাচ্ছে না। সংবিধান রক্ষা করে কীভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব- জানতে চাইলে বলেন, এ সংবিধানের অধীনে নির্বাচন করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসেনি। তারা আগের সংবিধানের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতায় এসে সংবিধান সংশোধন করেছে। এ সংবিধান সংশোধন করার ম্যান্ডেট তারা জনগণের কাছ থেকে নেয়নি। পার্লামেন্টে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল, তারা ইচ্ছামতো সংবিধান করে দিল যে পার্লামেন্ট রেখে নির্বাচন করব। বেশির ভাগ মানুষ যদি নতুন সংবিধানের অধীনে নির্বাচন না চায় তাহলে সরকারের উচিত সংবিধান সংশোধন করে নেওয়া। মানুষ যেটা চায়, সেটা করা উচিত। সংবিধান হলো দেশ রক্ষার জন্য, দেশ ধ্বংস করার জন্য নয়। কোনো রাজনৈতিক সংকট হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সবাই দেখছি নির্বাচন সংকট। নির্বাচন হলে কী হবে, না হলে কী হবে। আমি সংকটটা দেখছি আরও গভীরে। এটা সাংবিধানিক সংকট। একটা সংবিধান ছিল, যার অধীনে অনেকগুলো নির্বাচন হয়েছে। তারপর ওই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন করেই একটা দল সংবিধান সংশোধন করে ফেলল হঠাৎ করে। তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। সংশোধন করার পাশাপাশি বলে দিয়েছে, এটা আর পরিবর্তন করা যাবে না। এভাবে সংবিধান সংশোধন করে রাখা যায় না। এটা নতুন কোনো দল এলে আবার পরিবর্তন করবে। সংকটটা সৃষ্টি করা হয়েছে কোর্টের মাধ্যমে সংবিধানকে দিয়ে। তাই কোর্টও এখানে জড়িত। কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে কিন্তু একটা উপায় রেখেছিল। দুটো নির্বাচন সংবিধানের অধীনে হতে পারে। কিন্তু এটাকে না মেনে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে প্রতিবেশী রাষ্ট্র নির্বাচনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে। দেশের মানুষ তাকিয়ে দেখেছে। ২০১৮-তে আলোচনাও হয়েছে, ঐকমত্যের কথাও হয়েছে কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। কেন হয়নি, সেটা অন্য বিষয়। এখন একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি হতেও পারে। তিনি বলেন, গভীর অর্থনৈতিক সংকট আছে এখন। রাজনৈতিক সংকট দেখা যাচ্ছে। ব্যাংক, রিজার্ভ, দ্রব্যমূল্য, রেমিট্যান্স, এক্সপোর্ট- এসবে সমস্যা বাড়বে। সামনের বছর থেকে বাজেটের একটা বিরাট অংশ ঋণ পরিশোধে ব্যয় হবে। সমস্যা বাড়বে অনেক। যদি নতুন সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে না আসে তাহলে সামনের বছর থেকে যে সমস্যাগুলো উদ্ভব হবে- জনগণের সুষ্ঠু ভোটে আসা সরকার আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায় যেভাবে আস্থায় আনতে পারবে সেটা কিন্তু গ্রহণযোগ্য ভোট না হলে পারবে না। তখন জাতি হিসেবে আমরা কী করব, এটার কূলকিনারা পাওয়া যাচ্ছে না। ভিসা সংকট নিয়ে তিনি বলেন, ভিসা সংকটটা সবার নয়। কয়েক লাখ মানুষের, যারা ক্ষমতার কাছাকাছি আছে। কিন্তু বাকি যে অর্থনৈতিক বিষয় বললাম এগুলো দেশের সব মানুষেরই। অর্থনৈতিক সংকটটা অনেক প্রকট হবে। রাশিয়া, চায়না, ইন্ডিয়া আমাদের সংকট থেকে উদ্ধার করতে পারবে কি না সে প্রশ্নও রাখেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর