শিরোনাম
রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
মাঠে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সহযোগী সংগঠন

৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম কই, প্রশ্ন কাদেরের

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম কই, প্রশ্ন কাদেরের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির রাজনীতি কবরস্থানে যাওয়ার সময় এসে গেছে। গতকাল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে অনুষ্ঠিত কৃষক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

১৯৯৫ ও ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার কর্তৃক নিহত শহীদ কৃষকদের স্মরণে বাংলাদেশ কৃষক লীগ এই মহাসমাবেশের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ। সঞ্চালনা করেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিকে জিজ্ঞেস করতে চাই, ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম কই? ভুয়া। আলটিমেটাম ভুয়া। এক দফা ভুয়া, বিএনপি ভুয়া। ৩২ দল ভুয়া, আন্দোলন ভুয়া। তারা বলে, শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাবে। আমি আজ এই সমাবেশে ঘোষণা করতে চাই, সেদিন আর বেশি দূরে নেই যেদিন বিএনপির রাজনীতি কবরস্থানে যাবে। কবরস্থানে যাওয়ার সময় এসেছে। তারা বলে, অবৈধ সরকারের কাছ থেকে আর নাকি অনুমতি নিবে না। অবৈধই যদি বলেন তাহলে খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদন কেন করেন? মিটিং করতে হলেও তো সরকারের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিলে খবর আছে। অনুমতি না নিলে পালাবার পথ পাবেন না। তিনি বলেন, যাদের হাতে ১৫ আগস্টের রক্তের দাগ, ৩ নভেম্বরের রক্ত, ২১ আগস্টের রক্ত, বাংলার কৃষক, শ্রমিক, অবলা নারী, অবুঝ শিশুর রক্ত।

ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, অর্থ পাচারকারী হলো বিএনপি। এদের হাতে বাংলাদেশ নিরাপদ নয়। দেশের গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। জনগণের স্বচ্ছ ভোট নিরাপদ নয়। এদের হাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিরাপদ নয়। এরা চায় খুন আর সন্ত্রাসের বাংলাদেশ। এরা চায় দুর্নীতি আর স্বৈরাচারের বাংলাদেশ। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তৈরি হয়ে যান। খেলা হবে। জোরদার খেলা। সামনে নভেম্বর। এরপরে ডিসেম্বর। তারপর জানুয়ারি। ফাইনাল খেলা। কৃষক ভাইয়েরা প্রস্তুত হয়ে যান। নেত্রী আসছেন। যখনই ডাক দিবে আপনাদেরকে রাস্তায় নেমে আসতে হবে।

বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এই নগরীর রাজপথ তোমাদের দখল করার অধিকার নেই। যারা দখল করবে তাদের খবর আছে। যারা আগুন নিয়ে আসবে তাদের হাত আমরা পুড়িয়ে দেব। যারা ভাঙচুর করতে আসবে তাদের হাত আমরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ছাড়া ক্ষমতার মঞ্চে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। আপনাদের ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা নিরাপদ নয়। শেখ হাসিনা আছেন বলেই বাংলাদেশ শান্তিতে আছে। তিনি বলেন, কী সুন্দর বাংলাদেশ। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। খালেদা জিয়ার আমলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকত না। সারা দেশে এখন কোথাও লোডশেডিং নেই। কয়েকদিন পরে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে মেট্রোরেল। কী সুন্দর অল্প পয়সায় মতিঝিল থেকে উত্তরা। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফার্মগেট থেকে এয়ারপোর্ট মাত্র ৮ থেকে ১০ মিনিটে। সন্ধ্যাবেলা এক্সপ্রেসওয়ের ওপর যখন দাঁড়াবেন কী সুন্দর আলো ঝলমলে বাংলাদেশের চিত্র। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে এসেছেন। আমরা আর কোনো কালো হাতে বাংলাদেশকে ছেড়ে দেব না।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষকরাও এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ বিএনপি জনজীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারের দাম কমিয়েছেন, ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা তুলে নিয়েছেন। কৃষির উন্নয়নে এ রকম অসংখ্য উদ্যোগ আছে তাঁর।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি বলেন, বিএনপি-জামায়াত কৃষকের সার অবৈধ পথে পাচারের উদ্দেশে গোডাউনে রেখে দিয়েছিল। ১৯৯৫ সালে কৃষকরা চাষের জন্য সার চাইতে গিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত সারের বিনিময়ে গুলি উপহার দিয়েছিল। ১৯ জন কৃষককে হত্যা করেছিল। দেশের মানুষ এ হত্যাকারীদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নায্যমূল্যে সারের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকদের বুকে পাখির মতো যারা গুলি চালিয়েছিল তারা বাংলার কৃষকের কাছে ক্ষমা চাও। তারা হয়তো ক্ষমা করে দিতেও পারে।

সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি আর মানুষ হইলো না! পায়ের নিচে মাটি নাই, কোমরে জোর নাই। তাদের সাধের পাকিস্তান আর আসবে না।’

আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি বলেন, কৃষিবান্ধব জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতি বছর কৃষকদের জন্য কৃষি খাতে ভর্তুকি দিচ্ছেন। বিএনপি সময় বেঁধে দিয়েছে, অক্টোবরের মধ্যে এই সরকারের পতন ঘটাবে। শুধু অক্টোবর নয় আমরা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থাকব। অগ্নিসন্ত্রাসের জন্য যারা প্রস্তুতি নিচ্ছে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করছে তাদের সব পরিকল্পনা আমরা নস্যাৎ করে দেব।

বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে যারা ব্যাহত করতে চায়, আবারও কৃষক হত্যার রাজনীতি করতে চায় সেই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, কৃষক লীগ সব সময়ই কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে। দেশের সংকটের সময় আমাদের সবার শক্তি, সাহস, প্রেরণার উৎস জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তারেক জিয়া লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্র করছে। শেখ হাসিনা ২ কোটি ১০ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছেন, এক কোটি কৃষককে ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ভর্তুকির টাকা দিচ্ছেন। কৃষিতে সেচের জন্য বিদ্যুতে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছেন। সেই শেখ হাসিনাকে হঠানোর ষড়যন্ত্র করছে তারা যারা কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল।

আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্মল চ্যাটার্জি, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল এমপি, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, কৃষক লীগের সহসভাপতি শরীফ আশরাফ ওয়ালী, মাহবুব-উল আলম শান্ত, আকবর আলী চৌধুরী, হোসনে আরা বেগম এমপি, আবদুল ওয়াদুদ, আবদুল লতিফ তারিম, নজরুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, আবুল হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন সুইট, অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম হিরণ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু, অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানম, আজম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী জসিমউদদীন, আসাদুজ্জামান বিপ্লব, ড. মো হাবিবুর রহমান মোল্লা, শাকিল উজ জামান শাকিব, নূরে আলম সিদ্দিকী, অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম পানু, হিজবুল বাহার রানা, কোষাধ্যক্ষ নাজির মিয়া, ভারপ্রাপ্ত প্রচার সম্পাদক নুরুল ইসলাম বাদশা, দফতর সম্পাদক রেজাউল করিম, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক হালিমা খাতুন, বেসরকারি সংস্থা বিষয়ক সম্পাদক মিরুল ইসলাম, কৃষক লীগের আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট জহির উদ্দিন লিমন, ঢাকা জেলা উত্তর কৃষক লীগের আহ্বায়ক মহসীন মিয়া, ঢাকা মহানগর উত্তর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিম খান।

জামালপুরের মেলান্দহের শহীদ কবিরের ছেলে মুনকির বলেন, ১৯৯৫ সালে এক বস্তা সারের মূল্য ছিল ১৮৬ টাকা। বিএনপি-জামায়াত সরকার সারের মূল্য বাড়িয়েছিল ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। যা ছিল বাংলার কৃষকের সাধ্যের বাইরে। আমার বাবা মেলান্দহে গিয়েছিল সারের দাবিতে। কিন্তু তারা আমার বাবাকে লাশ বানিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিল। ছোট বেলা থেকে পিতৃহীন এই আমাকে লালনপালন করেছেন প্রিয় নেতা মির্জা আজম এমপি। তিনি আমার পরিবারকে নিয়মিত দেখাশোনা করেছেন। তিনি না থাকলে আমি হয়তো আজকে আপনাদের সামনে কথা বলতে পারতাম না। আমার বাবার রক্ত বৃথা যায়নি। এখন আর বাংলার কৃষককে সারের জন্য বুকের রক্ত দিতে হয় না। এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।

 

সর্বশেষ খবর